দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় শেখ হাসিনা চলে যান বলে দাবি করেছেন তার ছেলে ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছেন তিনি।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরে তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন তিনি ভারতেই থাকছেন।
জয় বলেন, ‘আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা ছিল একটি বিবৃতি দেওয়ার পর পদত্যাগ করা। কিন্তু তার আগেই বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। ফলে সে সময় কোনো সময়ই ছিল না। আমার মা কোনো কিছু গোছাতেও পারেননি। তাই সংবিধান অনুযায়ী আমার মা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যদিও সেনাপ্রধান ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।’
জয় বলেন, ‘দল হিসেবে আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে এই নির্বাচন হতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে অথবা বিরোধী দলে যাবে। তা না হলে আমরা বিরোধী দল হবো। যাই হোক ভালো হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিএনপি প্রধান বলেছেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর কোনো প্রতিহিংসা দেখাবেন না। আমি বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতি শুনে খুব খুশি হয়েছি যে অতীত অতীতই থাক। আসুন অতীত ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্য সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
জয় দাবি করেন, ‘তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।’
আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘মা এই মেয়াদের পর অবসর নিতে যাচ্ছেন। দল যদি আমাকে চায়, আমি অবশ্যই সেটা বিবেচনা করবো।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তার মা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। গ্রেপ্তারের হুমকিতে আমার মা কখনো ভয় পাননি। মা কোনো অন্যায় করেননি। তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন। তার মানে এই নয় যে মা তাদের আদেশ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে মা এর জন্য দায়ী।’
তবে বিক্ষোভের সময় মানুষকে গুলি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের কারা দায়ী, জয় সেটা বলেননি।
একটি সরকার অনেক বড় যন্ত্র দাবি করে জয় বলেন, ‘যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। মা কাউকেই আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা করার নির্দেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। আমি সেই আলোচনায় ছিলাম এবং আমার মাকেও বলেছিলাম যে আমাদের অবিলম্বে (ছাত্রলীগকে) বলতে হবে হামলা না চালাতে, সহিংসতা বন্ধ করতে।’
চাইলেই তিনি দেশে ফিরতে পারেন জানিয়ে জয় বলেন, ‘আমি কখনোই বেআইনি কিছু করিনি। তাহলে কেউ আমাকে আটকাবে কেন?’
আরও পড়ুন:
কবে দেশে ফিরছেন শেখ হাসিনা, জানালেন জয়
আ.লীগের কেন্দ্রীয় অফিস এখন ছাত্র-জনতার কার্যালয়
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোথায়