রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৯ আগস্ট, ২০২৪ ৩:০১ : অপরাহ্ণ
গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
তার দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেই দেশে ফিরবেন হাসিনা। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন কিনা তা স্পষ্ট করেননি জয়।
আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরপরই জয় জানিয়েছিলেন, হাসিনা আর কখনোই দেশে ফিরবেন না। পরে অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন যখন বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে তখনই তিনি (হাসিনা) ফিরে আসবেন।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আপাতত তিনি (হাসিনা) ভারতে আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার যখনই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেবে তখনই তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। আমার মায়ের জীবন বাঁচানোয় আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞ।’
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের অনেক স্থানে দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর একের পর এক হামলার খবর আসছে। নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপনে আছেন দলটির সিংহভাগ নেতা। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে আসতে প্রস্তুত। দল ও দলের কর্মীদের রক্ষায় যা করা দরকার, তার সবটাই আমি করবো।’
যদিও এর আগে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দিন নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দ্রুতই দেশে ফিরবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই মূলত রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জয় বলেন, ‘আমাকে যদি রাজনীতিতে যোগ দিতে হয়, তবে আমি তা থেকে নিজেকে বিরত রাখব না। আমার মা এ মেয়াদ পূর্ণ করেই রাজনীতি থেকে অবসর নিতেন। আমার কখনোই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। আমি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। তবে বাংলাদেশে কয়েক দিন ধরে চলা ঘটনাপ্রবাহে নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দলের জন্য আমাকে সক্রিয় হতে হবে। এখন আমিই সামনে আছি।’
জয় আক্ষেপ করে বলেন, ‘আত্মসমালোচনা করার সুযোগ থাকা উচিত। আপনি যখন একটি দেশ চালাবেন, তখন আপনাকে প্রতিদিন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ আত্মসমালোচনায় বিশ্বাস করে এবং আমরা সে জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু এবার আমাদের আত্মসমালোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁদের (শিক্ষার্থী) দাবি মেনে নেওয়ার পরও পরিস্থিতি যে এত দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা আমরা কখনোই ভাবিনি।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
গত ৬ আগস্ট দুপুরে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
আরও পড়ুন:
আ.লীগের কেন্দ্রীয় অফিস এখন ছাত্র-জনতার কার্যালয়
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোথায়