রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৪ আগস্ট, ২০২৪ ২:০২ : অপরাহ্ণ
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি অদায়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। বিভিন্ন স্থানে হামলা-আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে।
আন্দোলকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সারাদেশে এখন পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, বগুড়ায় ৩ জন, পাবনায় ৩ জন, কুমিল্লায় ১ জন, সিরাজগঞ্জ ১ জন, বরিশালে ১ জন এবং জয়পুরহাটে ১ জন এবং অন্যান্য স্থানে ৬ জনসহ মোট ১০০ জন নিহত হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জে নিহত ৩
মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে তিনজন মারা গেছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান একজন। আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১২ টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।
নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের অধিকাংশের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল বেলা পৌনে ১২ টার দিকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মাগুরায় নিহত ৩
ওদিকে মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১ টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন রাব্বী।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়। এছাড়া চবি শিক্ষার্থী ফরহাদ ও কলেজ শিক্ষার্থী সুমন নামের একজন ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রংপুরে নিহত ৪
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।
বগুড়ায় নিহত ৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।
বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা।
পাবনায় নিহত ৩
পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হলে ৩ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা এই গুলি চালান। বিক্ষোভকারীরা এরপর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)।
অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, জয়পুরহাট এবং কুমিল্লায় একজন নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন:
শাহবাগে ছাত্রলীগ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন
সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু, যেসব নির্দেশনা মানার আহ্বান