রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ জুন, ২০২৪ ৯:৩১ : অপরাহ্ণ
ঝিনাইদহ- ৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটটিতে হত্যার ছবি কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। একইসঙ্গে সেদিন এমপি আনারের সঙ্গে কী ঘটেছিল, এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্যও বেরিয়ে এসেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতায় আটক কসাই জিহাদ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, এমপি আনার ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার পর তাকে প্রথমে রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে অচেতন করা হয়। এরপর তাকে বালিশ চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা করার পর ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমে তার মরদেহ টুকরো টুকরো ফ্ল্যাশ করা হয়।
হত্যা করেই থামেনি খুনিরা। মৃত আনারকে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়। কপাল ও দাঁত বরাবরও কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখে হত্যাকারীরা।
জিহাদের স্বীকারোক্তিতে আরও জানা যায়, ফ্ল্যাটটির ড্রয়িং রুমে এমপি আনারকে স্বাগত জানান সিলাস্তি। পরে আসে জিহাদ। তখন সিলাস্তিকে নিচের ফ্লাটে যেতে বলা হয়।
পুলিশ জিহাদকে নিয়ে ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর সে দেখায়, কোথায় বালিশ চাপা দিয়ে আনারকে হত্যা করা হয়।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, এই লাশের কোন টুকরো যেনো কোনদিন না খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য তারা সিয়াম এবং জিহাদকে ব্যবহার করেছে। তারা এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যেন একজনের তথ্য অন্যের কাছে না যায়।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে ব্যক্তিগত সফরে ভারতে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৭ মে থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন তার নিখোঁজের বিষয়ে উত্তর কলকাতার বরানগর থানায় একটি জিডি করেন সেখানকার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপর সংসদ সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকায় গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির কাছে বাবার নিখোঁজের অভিযোগ দেন।
নিখোঁজের ১০ দিন পর গত ২২ মে সকালে ভারতীয় গণমাধ্যমে এমপি আনার খুন হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। খবরে বলা হয়, এমপি আনারকে ১৩ মে রাতে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন করা হয়। এরপর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়।
এমপি আনারকে হত্যার ঘটনায় ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। পাশাপাশি ভারতের কলকাতার নিউ টাউন থানায় সেখানকার পুলিশ একটি মামলা করেছে।
হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও কলকাতা পুলিশ মরদেহের কোনো ক্লু পাচ্ছিলো না। পরে নিজেদের গ্রেপ্তার করা সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কলকাতায় পা দেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও তার প্রতিনিধিদল।
এরপর ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের অনুরোধে কলকাতার সিআইডি পুলিশ গত ২৮ মে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি অভিযান চালায়। অভিযানে সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের টুকরো টুকরো কিছু মাংস উদ্ধার করা হয়। মরদেহের এসব মাংস এমপি আনারের বলেই ধারণা ডিবি ও পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির।
তবে সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত হতে মরদেহের মাংসগুলোর ডিএনএ ও ফরেনসিক টেস্টের প্রক্রিয়া চলছে এখন।
এর মধ্যে গত ৯ জুন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করেছে কলকাতার সিআইডি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের সাতুলিয়ার বাগজোলা খাল থেকে এসব হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
তবে হত্যা রহস্যের জট খুলতে আরও গভীর তদন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে কলকাতা ও বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
আরও পড়ুন:
এমপি আনার হত্যা: খালে তল্লাশি চালিয়ে মিললো হাড়গোড়
এমপি আনার খুন: সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে মিললো মরদেহের টুকরো
এমপি আনারের মরদেহ কিমা করে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করা হয়: ডিবি প্রধান
এমপি আনার ফ্ল্যাটে ঢুকলেন পায়ে হেঁটে, বের হলেন টুকরো টুকরো হয়ে
৫০০০ টাকায় এমপি আনারের দেহ ৮০ টুকরো, কসাই জিহাদের লোমহর্ষক বর্ণনা
৫ কোটি টাকার চুক্তিতে এমপি আনার খুন, নেপথ্যে…
ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল এমপি আনারের বিরুদ্ধে
এমপি আনারের আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে জটিলতা