রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ মার্চ, ২০২৪ ১০:৩৩ : পূর্বাহ্ণ
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র অদূরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্সে (সাবেক টুইটার) এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্স হ্যান্ডেলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের তিনটি ছবি এবং একটি ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।
ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টার মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজটি বাংলাদেশের জিম্মি জাহাজের কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যেতেও দেখা যায়।
ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও কোনো অভিযানের বিষয়ে জানা যায়নি।
জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের কাছে ইইউ নেভির যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন প্রসঙ্গে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মার্জিয়া মুমু বলেছেন, বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজে কারও অভিযান চালানোর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের কবলে থাকা ওই জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারে আলোচনা চলমান। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’
এর আগে সোমালিয়া উপকূলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার মুহূর্তে ইইউর একটি টহল জাহাজ চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা অভিযানে যাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু নাবিক, ক্রু এবং অন্যদের প্রাণনাশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকারের তরফে অভিযানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: জিম্মি জাহাজে অভিযানের অনুমতি চেয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইইউ নেভাল ফোর্সের গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জলদস্যুতার ঝুঁকি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ নভেম্বর থেকে এদিন পর্যন্ত ২৫টি নৌযানে ছিনতাই ও ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে দস্যুরা। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছোট নৌযান। সর্বশেষ শুধু বাংলাদেশি জাহাজটিই এখন সোমালিয়ার দস্যুদের কাছে জিম্মি রয়েছে।
এর আগে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ কে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ খবর শুনে এমভি আবদুল্লায় সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
আরও পড়ুন:
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের বিরোধিতা মালিকপক্ষের
সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় গত ২০ মার্চ দুপুরে প্রথমবারের মতো মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
আরও পড়ুন: জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলো জলদস্যুরা
গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ।
সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায়। জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়া উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে জলদস্যুরা।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা নাবিকদের মধ্যে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আছেন ১১ জন। বাকিরা ফেনী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার।
এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর কেএসআরএম গ্রুপের ‘এমভি জাহান মণি’ নামের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। বড় অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক।
আরও পড়ুন:
জিম্মি জাহাজ নিয়ে কী হচ্ছে, নাবিকদের পরিবারে উদ্বেগ
সোমালি জলদস্যু কারা, কীভাবে তাদের উত্থান