ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে বিএনপির সংহতি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে বিএনপি।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান।

এ সময় তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতি প্রকাশ করে নিজের গায়ের চাদর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম-খুন-অবিচার, কুশাসনের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে। সরকার দেশকে প্রতিবেশী দেশের ‘স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে। সে জন্য জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে।’

‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, ভারত’ উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা এবং বিনা ভোটে অবৈধ ক্ষমতার অমরত্ব লাভের অপচেষ্টায় প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কথা জোর গলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। কথায় কথায় প্রায় সব মন্ত্রী ভারত বন্দনায় মত্ত হচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে মনে হচ্ছে- বাংলাদেশ এখন ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন বা শক্তিতে নয়, ভারতের শক্তি ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। আর এই টিকে থাকার জন্য যত দমন-পীড়ন, গুম, খুন, হত্যা, মামলা-হামলা করা যায় তার সব কিছু করছে ভারতের মদদে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদের অকপট স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে জাতিসংঘ সনদের ২ (৪) ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করে ভারত আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার সব কিছুর উপর সরাসরি নগ্ন হস্তক্ষেপ করে চলেছে। জাতিসংঘ সনদের ২ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য রাষ্ট্র আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় স্পষ্ট যে, ভারত এ নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রয়েছেন দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে স্বাধীন দেশকেও এখন ডামি রাষ্ট্র মনে হয়। বিনা ভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তারা পুরো দেশটাকেই ডামি রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, ভারত। ভারতই সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার তছনছ করছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘বিভিন্ন মানুষ বলে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান, বিডিআর প্রধান, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের প্রধান কে হবেন সেটি নিয়ে নাকি ভারতের সুপারিশ থাকে। ভারত যদি কারও বিরুদ্ধে আপত্তি দেয়, তাহলে তিনি নিয়োগ পান না। গত নির্বাচনে জনগণ দেখেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ভারতীয় কূটনৈতিকরা বাংলাদেশে এসে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা স্থিতিশীলতা চান। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার চান না। ভারত মনোনীত প্রার্থীরা বীরদর্পে বলছেন, ‘আমাকে ভারত মনোনয়ন দিয়েছে। আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’ তাহলে বাংলাদেশ কি পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ? তলে তলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে?’’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামী করলেও এ দেশের মানুষ তা করবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের নীতি নিয়ে। তাই দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগ নয়, ১৮ কোটি মানুষের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের ভূমিকায় ফিরে আসবে ভারত সরকার।’