রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৮:৩১ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয়কে নির্বাচনী ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সংগঠনটির কার্যালয়ে এবার নির্বাচনী সভা করেছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী এম এ লতিফ।
আজ মঙ্গলবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে তিনি নির্বাচনী সভা করেন।
এর আগে গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি সেখানে নির্বাচনী সভা করেন।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা এই সভায় অংশ নেন।
গত সোমবার মহানগর যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল হক সুমন ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের নেতৃত্বে সংগঠনটির ৩৮ জন নেতা সভায় অংশ নেন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই সভা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে।
দুটি সভায় এম এ লতিফ তার আসনের নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংগঠন দুটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
জানা গেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ট্রেড বডি চট্টগ্রাম চেম্বারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলটি পাবলিক প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় না।
জানতে চাইলে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি (এম এ লতিফ) ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি আমাদের ওই হলে ডেকে নিয়েছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করি।’
এ বিষয়ে জানতে এমপি এম এ লতিফের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এরপর চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের কনফারেন্স হলে ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নারী কর্মীদের সঙ্গে সভা করেছিলেন এমপি লতিফ।
আরও পড়ুন:
চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের একি কাণ্ড!
সুমনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না লতিফ
চট্টগ্রাম চেম্বারের মতো বিজনেস কমিউনিটিতে এমপি লতিফের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা নিয়ে তখন ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠে। চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতারা এতে বিস্মিত হন। তারা এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেন।
দুই মাস পর তিনি এবার চেম্বারের ভেতরে নির্বাচনী সভা করলেন। চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের কোনো এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, এমপি লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারকে রীতিমতো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পরিণত করে ফেলেছেন। তিনি সেখানে একের পর এক রাজনৈতিক সভা করছেন। এতে এই বিজনেস কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অথচ তিনি এখন চট্টগ্রাম চেম্বারের কোনো দায়িত্বে নেই। এরপরও তিনি সেখানে ক্ষমতার দাপট দিয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। কিন্তু কেউ ভয়ে তার এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না।
গত ৮ আগস্ট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হন ওমর হাজ্জাজ। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান।
অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে কব্জায় রেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক দুই সভাপতি এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লতিফ ২০০৮-১০ মেয়াদে প্রথম চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার লতিফ চেম্বারে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেন।
এম এ লতিফের বলয় থেকে টানা চারবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেম্বারের সভাপতি হন মাহবুবুল আলম। তিনি সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি লতিফ। তিনিই চেম্বারের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দেন। তার প্যানেল থেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ আছে। এর বাইরে থেকে কারো পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হয় না চট্টগ্রাম চেম্বারে। এবারের নির্বাচনে ছেলে ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি করার বিষয়টি পরিচালকদের নির্ধারণ করে দেন এম এ লতিফ। এ ছাড়া তার আরেক ছেলে ওমর মুক্তাদিরকে পরিচালক করা হয়েছে। আর মাহবুবুল আলমের মেয়ে রাইসা মাহবুবকে সহসভাপতি পদে বসানো হয়েছে।
ব্যবসায়ী মহলের মতে, চট্টগ্রাম চেম্বার এখন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। দুই ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানকে এখন কব্জায় নিয়েছে।
আরও পড়ুন:
শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারে কী হচ্ছে?
মাসে কোটি টাকা আয় করেও ট্যাক্স দেয় না চট্টগ্রাম চেম্বার