রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৪ নভেম্বর, ২০২৩ ৪:৩১ : অপরাহ্ণ
বছরে কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সে হানা দিয়েছেন কর পরিদর্শক। চট্টগ্রাম চেম্বারকে আয়কর রিটার্ন (সম্পদের বিবরণী) দাখিল করতে গত ১২ অক্টোবর নোটিশ পাঠিয়েছিল এনবিআর। কিন্তু চট্টগ্রাম চেম্বার নোটিসের জবাব দেয়নি।
নোটিসের জবাব না দেওয়ায় গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের সার্কেল-৯ এর একজন কর পরিদর্শক নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চেম্বারের কার্যালয়ে আয়কর তথ্য তল্লাশি করতে যায়। চেম্বার কর্তৃপক্ষ কর পরিদর্শকের উপস্থিতি দেখে ট্যাক্স পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন-চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ মাসে কোটি টাকা আয় করলেও বছরের পর বছর ধরে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছে। এ নিয়ে গত ৯ অক্টোবর রাজনীতি সংবাদে ‘মাসে কোটি টাকা আয় করেও ট্যাক্স দেয় না চট্টগ্রাম চেম্বার’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের নজরে আসে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম চেম্বারকে এনবিআর থেকে গত ১২ অক্টোবর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা অগ্রাহ্য করে, ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য নানা অজুহাত দেখায়। এরপর আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারে একজন কর পরিদর্শককে তল্লাশি করতে পাঠায়। তখন তারা নমনীয় হয়ে কর পরিশোধ করতে সম্মত হয়।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সেক্রেটারি ইনচার্জ প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুকের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ব্যক্তিশ্রেণি করদাতার মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও মুনাফার ওপর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়, যাকে বলা হয় করপোরেট কর। ২০২৩ সালের আয়কর আইনে বাণিজ্য সংগঠনকে করপোরেট করের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
২০১৩ সালের এনবিআর একটি এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ, নম্বর-২১০) জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বাণিজ্য সংগঠন মুনাফা এবং ব্যবসা হতে আয় করলে কর প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু এরপরও চট্টগ্রাম চেম্বার কর পরিশোধ করেনি।
আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী, বাণিজ্য সংগঠনকে বার্ষিক আয় থেকে ২৭.৫ শতাংশ কর দিতে হবে। আর বাণিজ্য সংগঠনের স্থায়ী আমানত সুদহার (এফডিআর) থেকে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আগের আয়কর আইনে বাণিজ্য সংগঠনের করের হার ছিল ১৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম চেম্বারের গত অর্থ বছরের (২০২১-২০২২) অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৮টি ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী আমানত (এফডিআর) আছে ৬৯ কোটি ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৬ টাকা। ব্যাংকের এফডিআর ছাড়া ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্পেস ও হলরুম ভাড়া, পুরনো চেম্বার হাউসের ভাড়া, বাণিজ্য মেলা এবং অন্যান্য খাত থেকে চট্টগ্রাম চেম্বার গত বছর আয় করেছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
সে হিসাবে মাসে প্রায় এক কোটি আর বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা আয় হয় চট্টগ্রাম চেম্বারের।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, চট্টগ্রাম চেম্বারের কী পরিমাণ ট্যাক্স নির্ধারণ করবে আয়কর বিভাগ?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী ২০১৩ সালের এনবিআরের এসআরও জারি হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ বছরের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতে পারে। চট্টগ্রাম চেম্বারের ব্যাংকের এফডিআরের সুদ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্পেস ও হলরুম ভাড়া, পুরনো চেম্বার হাউসের ভাড়া এবং বাণিজ্য মেলা থেকে প্রদত্ত আয়ের ওপর কর দিতে হবে।
এ ছাড়া চেম্বারের সম্পদের বিপরীতে সারচার্জও (অতিরিক্ত কর) ধার্য হবে। এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে আয়করের ওপর বিভিন্ন হারে সারচার্জ দিতে হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার কোনো ধরনের ব্যাংকঋণ ছাড়াই নিজস্ব অর্থে ২৪ তলা উচ্চতার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটি ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘একজন পরিদর্শক চট্টগ্রাম চেম্বারের করযোগ্য আয়ের তথ্য তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্টের আলোকে তাদের করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মাসে কোটি টাকা আয় করেও ট্যাক্স দেয় না চট্টগ্রাম চেম্বার
আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চট্টগ্রাম চেম্বারকে এনবিআরের নোটিশ
চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের একি কাণ্ড!
শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারে কী হচ্ছে?