রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৬:১৫ : অপরাহ্ণ
আবারও সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
গতকাল রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীকে ইঙ্গিত করে ‘কটাক্ষ’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই অনুষ্ঠানে সৈয়দ নজিবুল বশর আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক পাবেন জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার প্রতীক নৌকায় উঠে বৈতরণী (নদী) পার হবো, তরিকতের ফুলের মালা নিয়ে বিজয়ের বেশে নামবো আর সুপ্রিম পার্টি একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে আমাকে বরণ করে নেবে।’
নজিবুল বশরের এই বক্তব্যের পর তাকে নিয়ে ফটিকছড়িতে সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সুপ্রিম পার্টির নেতা-কর্মীরা নজিবুল বশরের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করছেন।
ফটিকছড়ি সুপ্রিম পার্টির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, সুপ্রিম পার্টি নিবন্ধন পাওয়া এবং সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটা ইসলামী জোট গঠন হওয়ায় নজিবুল বশর তা সহ্য করতে পারছেন না। কারণ সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের ভিত্তি এখন মজবুত হয়েছে। এটা নজিবুল বশর ভালো চোখে দেখছেন না। আগামী নির্বাচনে তিনি ফটিকছড়িতে মনোনয়ন না পাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কৌশলে সাইফুদ্দীন আহমদকে কটাক্ষ করে এই বক্তব্য দিয়েছেন।
ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, নজিবুল বশর তাকে একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে বরণ করে নেওয়ার কথা বলে সাইফুদ্দীন আহমদকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি অনেকটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এ কথা বলেছেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করেছেন। অনুষ্ঠান শেষে অনেক মানুষ তার এই বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সৈয়দ নজিবুল বশর ও সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মধ্যে পারিবারিক সুসম্পর্ক থাকলেও সুপ্রিম পার্টি নিবন্ধন পাওয়ার পর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সৈয়দ নজিবুল বশরের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উনি (নজিবুল বশর) সম্পর্কে আমার চাচা। কিন্তু আমি কেন উনার জন্য একতারা বাজাবো? আমি কেন উনাকে বরণ করবো? উনার জন্য একতারা বাজাতে কি আমি দল গঠন করেছি? উনি (নজিবুল বশর) ১৪ দলের শরীক আর আমি একটা জোটের চেয়ারম্যান। সুপ্রিম পার্টির যে ভিত্তি আছে তরিকত ফেডারেশনের তা নেই। ১৬ সেপ্টেম্বর নাজিরহাটে বিশাল সমাবেশ করে আমাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছি। উনি (নজিবুল বশর) সবসময় দাম্ভিকতার সুরে কথা বলেন। এর আগে উনি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে কথা বলেছেন। মানুষ গর্তে পড়ার আগে অস্বাভাবিক আচরণ করেন।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার (নজিবুল বশর) কথা শুনে মনে হয়, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন উনিই দেবেন।’
ফটিকছড়ি সুপ্রিম পার্টির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (নজিবুল বশর) দলের (তরিকত ফেডারেশন) চেয়ারম্যান হয়ে তার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন না। নৌকায় উঠে বৈতরণী পার হন। এটা তো তার দলের জন্য সম্মানহানিকর। নিজের দলের প্রতীক নিয়ে যদি নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে দলটা কেন গঠন করলেন?’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নজিবুল বশরের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ তাকে নিয়ে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ ও ক্ষোভ রয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ফটিকছড়িতে তার ((নজিবুল বশর) কথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেউ পাত্তা দেয় না। আমরা এবার কোমর বেঁধে নেমেছি। আগামী নির্বাচনে তাকে নৌকার মনোনয়ন না দিতে আমরা দলের বিভিন্ন পর্যায়ে তৎপরতা চালাচ্ছি।’
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ফটিকছড়ি আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেন নজিবুল বশর। কিন্তু নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এরপর বিএনপি ছেড়ে তিনি তরিকত ফেডারেশন নামে নতুন একটি দল গঠন করেন।
আরও পড়ুন:
সুপ্রিম পার্টি কার সঙ্গে জোট করবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে
ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নিয়ে সরকারকে হুংকার দিলেন নজিবুল বশর
ফটিকছড়িতে নজিবুল বশরের মতো এমপি থাকলে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং থাকবে