রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:৫০ : অপরাহ্ণ
এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও আদতে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি বাংলাদেশের। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে রীতিমত আত্মসমর্পণ করায় ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। যার ফলে শুক্রবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য ছিল স্রেফ নিয়মরক্ষার। কিন্তু নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করে ভারতকে ৬ রানে হারিয়ে শেষটা রাঙিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার কলম্বোর প্রেমেদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৬৫ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৯.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রানে থামে ভারত।
২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলীয় ১৭ রানের মাথায় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও তিলক ভার্মাকে হারায় ভারত। রোহিত শূন্য ও তিলক ভার্মা ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর অবশ্য কেএল রাহুলকে নিয়ে জুটি গড়ে চাপ সামাল দেন শুভমান গিল। এই দুইজনের ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদি। ৩৯ বলে ১৯ রান আসে রাহুলের ব্যাট থেকে।
এরপর সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন শুভমান। সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন সাকিব। ৩৪ বলে ২৬ রান আসে সূর্যকুমারের ব্যাট থেকে।
এরপর জাদেজাকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন গিল। যদিও এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ১৭০ রানের মাথায় রবীন্দ্র জাদেজাকে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজ।
এরপর অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গী করে ভারতকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করতে থাকেন গিল। মাঝে তুলে নেন শতক।
শেষমেশ লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে গিলের ছোট ছোট জুটিতে ভর করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও জিততে পারেনি ভারত।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে লাল-সবুজ দল। কিন্তু বরাবরের মতো সেই ওপেনিংয়ে ব্যর্থতা। নাঈম শেখের বদলে একাদশে আসা তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস মিলে ওপেন করেন। এই জুটি টিকেছে মাত্র দুই ওভারে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বোল্ড হন লিটন। মোহাম্মদ শামির বল বুঝে ওঠার আগেই স্টাম্প হন তিনি। ফেরেন শূন্যতে। পরের ওভারে আউট হন তানজিদ হাসান তামিম। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম থেমেছেন ১৩ রানে। শার্দুলের ক্রস সিম ডেলিভারিতে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন এই ওপেনার।
মাত্র ১৫ রানে চাপা পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ালেন এনামুল হক বিজয়। ১০ মাস পরে একাদশে ফিরে তিনি টিকলেন মাত্র ১১ বল। শার্দুল ঠাকুরের বলে পুল করতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তুলে দেন এনামুল। উইকেটকিপার রাহুল ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি। ৪ রানেই বিদায় এনামুলের।
তিন টপ অর্ডারকে হারানোর ধাক্কা মিরাজকে নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু মিরাজও আশা জাগিয়ে পারলেন না থিতু হতে। ১৩ রানে মিরাজ পড়েন অক্ষর প্যাটেলের ফাঁদে।
চার ব্যাটারের বিদায়ের পর উইকেটে আশা জাগান সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়। সাকিব ৬৭ বল খেলে ফিফটি করে যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের দশম সেঞ্চুরিটা বোধ হয় আজই হয়ে যাবে।
কিন্তু ইনিংসের ৩৩.১তম ওভারে সেই আশা ভেস্তে দেন শার্দুল ঠাকুর। তামিমের মতো সাকিবকেও ইনসাইড-এজে বোল্ড করেন তিনি। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
সাকিবের বিদায়ে ভাঙে ১০১ রানের জুটি। এরপর উইকেটে এসে হতাশ করেন শামীম। উইকেটের এসে জাদেজার ২০০তম শিকার হন তিনি। ফেরেন মাত্র ১ রানে। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে উইকেটে থিতু ছিলেন হৃদয়। কিন্তু ৮১ বলে ৫৪ রান করে তিনিও ফিরলেন সাজঘরে।
বাকি পথ টানেন নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদি। বোলার নাসুম দায়িত্ব নেন ইনিংস গড়ার। খেলেন ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। মেহেদিও করেন ২৯ রান। ফলে লেজের শক্তিতে ভর করে মোটামুটি লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
ভারতের হয়ে বল হাতে ৬৫ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। ৩২ রানে দুটি নেন মোহাম্মদ শামি। জাদেজার শিকার একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (তামিম ১৩, লিটন ০, বিজয় ৪, সাকিব ৮০, মিরাজ ১৩, তাওহিদ ৫৪, শামীম ১, নাসুম ৪৪, মেহেদী ২৯, তানজিম ৯; শামি ৮-১-৩২-২, শার্দুল ১০-০-৬৫-৩, প্রসিদ ৯-০-৪৩-১, অক্ষর ৯-০-৪৭-১, তিলক ৪-০-২১-০, জাদেজা ১০-১-৫৩-১)।
ভারত: ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯ (রোহিত ০, শুভমান ১২১, তিলক ৫, রাহুল ১৯, ইশান ৫, সূর্যকুমার ২৬, জাদেজা ৭, অক্ষর ৪২, শারদুল ১১, শামি ৬, প্রসিদ ০; তানজিম ৭.৫-১-৩২-২, মোস্তাফিজুর ৮-০-৫০-৩, নাসুম ১০-০-৫০-০, সাকিব ১০-২-৪৩-১, মেহেদি ৮-১-৩৬-২, মিরাজ ৫-০-২৯-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৬ রানে জয়ী।