বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ | ১২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৯ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারে কী হচ্ছে?


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৩:৩৫ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তরুণ শিল্পপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চট্টগ্রাম চেম্বারের ১১৭ বছরের ইতিহাসে নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব, প্রকাশ্য বিরোধ থাকলেও কেউ পদত্যাগ করেননি।

সৈয়দ তানভীর গতকাল বুধবার লিখিতভাবে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। ইংরেজি ও বাংলায় লেখা পদত্যাগের দুটি চিঠিতেই তিনি ব্যক্তিগত কারণের পাশাপাশি চেম্বারের ‘বর্তমান এবং অনিবার্য পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করেন।

এর আগে গত ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে গঠিত ‘বাংলাদেশ সেন্টার অফ এক্সিলেন্স’ এর বোর্ড অব ট্রাস্ট থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন। চেম্বারের আগের কমিটির সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ তানভীর।

চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে সৈয়দ তানভীরের পদত্যাগের পর ব্যবসায়ী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

গত ৮ আগস্ট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হন ওমর হাজ্জাজ। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান।

৩২ বছর বয়সী ওমর হাজ্জাজ ২০১৭-১৯ সাল মেয়াদে প্রথম বিনা ভোটে পরিচালক হন। এরপর ২০১৯-২১ মেয়াদে একইভাবে সিনিয়র সহসভাপতি হন। একবার বিরতি দিয়ে এবারের কমিটিতে তিনি সভাপতি হয়েছেন।

শুধু সভাপতি নয়, চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান ২৪ পরিচালকদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কিন্তু নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় কেনো পরিচালকের পদ ছাড়লেন সৈয়দ তানভীর?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ তানভীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘পদত্যাগের কারণ হিসেবে চিঠিতে যা লিখেছি এর বাইরে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

আপনার পদত্যাগের পর ব্যবসায়ী মহলে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তরুণ এই শিল্পপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, ব্যবসায়ী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।’

সৈয়দ তানভীর তার পদত্যাগ নিয়ে সংশয় খোলাসা করে বলতে না চাইলেও চেম্বারের কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটির সঙ্গে মতদ্বৈততার জের ধরে তিনি পদ ছেড়ে দিয়েছেন।

কয়েকজন পরিচালকের মতে, মতদ্বৈততার সূত্রপাত হয় চেম্বারের সভাপতি নির্বাচন ঘিরে। এবার সভাপতি হওয়ার কথা ছিল সৈয়দ তানভীরের। কিন্তু ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ তানভীর বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। অনেক পরিচালকও এ নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু এতোদিন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি।

অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনিই চেম্বারের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দেন। তার প্যানেল থেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ আছে। এর বাইরে থেকে কারো পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হয় না চট্টগ্রাম চেম্বারে। এবারের নির্বাচনে ছেলে ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি করার বিষয়টি পরিচালকদের নির্ধারণ করে দেন এম এ লতিফ। এ ছাড়া তার আরেক ছেলে ওমর মুক্তাদিরকে পরিচালক করা হয়েছে। এর আগে এম এ লতিফের বলয় থেকে টানা চারবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেম্বারের সভাপতি হন মাহবুবুল আলম। তিনি সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম চেম্বার ছাড়লেও এবারের নির্বাচনে তার মেয়ে রাইসা মাহবুবকে সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে পরিচালক হয়েছেন নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান নুরুন নেওয়াজ সেলিমের মেয়ের জামাই বেনাজির চৌধুরী নিশান ও ছেলে মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ।

চট্টগ্রাম চেম্বারে সর্বশেষ ভোটাভুটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ সমর্থিত মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ জয়লাভ করে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো মোরশেদ-সালাম ঐক্য পরিষদ। পরের চারবার নির্বাচনে মাহবুবুল আলমের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো প্যানেল বা প্রার্থী ছিল না। তাই ভোটাভুটিও হয়নি। ২০০৮-১০ মেয়াদে এম এ লতিফ প্রথম চেম্বারের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তার প্যানেলই এ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

ব্যবসায়ী মহলের মতে, চট্টগ্রাম চেম্বার এখন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। দুই ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানকে এখন কব্জায় নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম চেম্বারের একজন পরিচালক রাজনীতি সংবাদকে বলেছেন, চট্টগ্রাম চেম্বার পরিবারতন্ত্র হয়ে উঠায় প্রতিবাদ হিসেবেই সৈয়দ তানভীর পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের ফলে চেম্বারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। হয়তো আরও অনেকে পদত্যাগ করতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজের ফোনে কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি রাইসা মাহবুব রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সৈয়দ তানভীরের হয়তো কোনো ব্যক্তিগত চাহিদা ছিল। হয়তো সেই চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। এতে চেম্বারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সামনে বোর্ড সভায় তার (সৈয়দ তানভীর) পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তখন তার পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হতে পারে।’

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর