রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ আগস্ট, ২০২৩ ৭:১৫ : অপরাহ্ণ
সফলভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। ভারতের স্থানীয় সময় আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা চার মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করে মহাকাশযানটির বিশেষ অংশ ল্যান্ডার বিক্রম।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) ওয়েবসাইটসহ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবের পেজে পাঁচটা ২০ মিনিট থেকে চাঁদে নামার সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। কোটি ভারতীয়সহ বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ উপভোগ করে এই মুহূর্তটি। এই মহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে স্কুলগুলোও এ সময় খোলা রাখা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন থেকেই ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে নামার দৃশ্যটি উপভোগ করেন।
চন্দ্রযান-৩ যেখানে নেমেছে, চাঁদের ওই অঞ্চলে বরফ পানি অথবা জমাট বাঁধা বরফ রয়েছে। এতে ওই স্থানটি পানির পাশাপাশি হতে পারে অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস। যা ভবিষ্যতে আরও চন্দ্রাভিযান অথবা স্থায়ীভাবে চাঁদে বসতি গড়তে সহায়ক হতে পারে।
ইসরো জানায়, গত সোমবার সকাল থেকে নিরাপদ অবতরণের জন্য চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে উপযুক্ত জায়গা খুঁজছিল। এটির ‘হ্যাজার্ড ডিটেকশন ও অ্যাভোয়ডেন্স’ ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলছে। এই সাদা-কালো ছবিগুলো গর্ত ও পাথরকে চিহ্নিত করে অবতরণে সাহায্য করবে।
চাঁদের এই অংশকে ‘চাঁদের অন্ধকার দিক’ বলা হয়। কারণ, এই দিক সম্পর্কে অল্প তথ্য জানা গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জায়গায় অবতরণ করা কঠিন।
ল্যান্ডারটি চাঁদের কাছের কক্ষপথে (২৫ থেকে ১৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে) অবস্থান করছিল; চাঁদে সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করছে।
ল্যান্ডার বিক্রমের সফল অবতরণের পর এবার এর সঙ্গে যুক্ত বিশেষ যান রোভার প্রজ্ঞা কাজ শুরু করেছে। এটি পরবর্তী ১৪ দিন চাঁদের বুকে ঘুরে বেড়াবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাবে ইসরোতে। সৌরশক্তির সাহায্যে এটি কাজ করছে।
পৃথিবীর হিসাবে চাঁদের মাস হয় ২৮ দিনে। সেখানে ১৪ দিন রাত, আবার ১৪ দিন সূর্যের আলো থাকে। বুধবার থেকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ১৪ দিন ধরে সূর্যের আলো থাকবে। তাই এই সময়কেই অবতরণের জন্য বেছে নিয়েছে ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
এর আগে রাশিয়ার প্রথম মহাকাশযান ‘দ্য ক্র্যাফট’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই নামতে চেয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস গড়লো ভারতের চন্দ্রযান-৩।
চতুর্থ দেশ হিসেবে এবার পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের মাটি স্পর্শের গৌরব অর্জন করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই মহান কৃতিত্বের মালিক ছিল।
এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে মহাকাশ অভিযানে যায় ভারতের ‘চন্দ্রযান-২’। তবে এটির ল্যান্ড-রোভার চাঁদে অবতরণের আগেই ধ্বংস হয়। মহাকাশযানের অরবিটারটি এখনো চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’।
ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।