রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৪ আগস্ট, ২০২৩ ৫:১৫ : অপরাহ্ণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
আজ সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর ডাকযোগে আবেদনপত্রটি পাঠিয়েছেন আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এ আবেদন করা হয়েছে বলে একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যেখানে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটছে। দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। দেশের জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো স্বীকৃত ব্যবস্থা নয় উল্লেখ করে আবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের দুয়েকটি দেশ ছাড়া কোথাও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। মূলত এই রাজনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোচনা ও সমালোচনা পরিত্যাগ করে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠন করলে একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো সংশয় থাকবে না, অপরদিকে ছোট-ছোট রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পরিচালনায় কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
আবেদনের বিষয়ে আইনজীবী মাহমুদুল হাসান জানান, নির্বাচনের সময় সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, সংঘর্ষ, রাস্তাঘাট অবরোধের কারণে জনগণ চরম ক্লান্ত ও বিরক্ত। দেশের তরুণ সমাজ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কর্মকাণ্ডে চরম হতাশ। দেশের মেধাবী তরুণ সমাজ প্রতিনিয়ত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার আবেদন করা হয়েছে।
সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। এই সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থায় বিদ্যমান সংসদ বহাল থাকবে। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করবেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। যিনি বিগত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। নতুন মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ সদস্য সংসদ সদস্য হবেন। তবে তারা এমন ব্যক্তি হবেন, যারা বিগত ১০ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী বাকি ১০ শতাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। এক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ জানাবেন তাদের দলের কোনো যোগ্য এক বা একাধিক সদস্যকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার প্রস্তাব দিতে।’
আইনজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে এমনভাবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অন্তত একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী থাকে। তবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরাও এমন ব্যক্তি হবেন– যারা বিগত ১০ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। তবে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাব না করলে সেক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী অন্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রস্তাবিত একাধিক মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। এভাবে একটি নতুন প্রধানমন্ত্রী ও নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে।’
তিনি জানান, সর্বদলীয় সরকারে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা মৃত্যুবরণ করেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পুনরায় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। যিনি বিগত ১০ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এ ছাড়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও আগের প্রস্তাব অনুসরণ করতে হবে। দেশের জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আবেদনে।