রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১১ জুলাই, ২০২৩ ৮:২১ : অপরাহ্ণ
মারামারির নাটক সাজিয়ে ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করেছিলেন তারা। ছিনতাই করার পর আরও একটা নাটক করেন তারা। একরামুল আলম নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। কিন্তু পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, এই একরামুল আলম হলেন ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড!
শেষ পর্যন্ত এই নাটক করে পুলিশের জালে ধরা পড়েন তিনি।
গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ী এলাকা থেকে একরামুল আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এক সময় রিয়াজউদ্দিন বাজারে পলিথিনের ব্যবসা করতেন।
গত রোববার দুপুরে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে নূর মোহাম্মদ ইয়াছিন কবির নামে এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী তার দুই কর্মচারীর মাধ্যমে নয় লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমার জন্য পাঠান। তারা ব্যাংকে যাওয়ার পথে রয়েল টাওয়ারের সামনে ছিনতাইয়ের মুখে পড়েন। ছিনতাইকারীরা দুজনকে ছুরিকাঘাত করে টাকাগুলো নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, টাকা নিয়ে দুই কর্মচারী দোকান থেকে বের হওয়ার পর থেকেই তাদের অনুসরণ করছিল ছিনতাইকারীরা। হোটেল সফিনার সামনে দিয়ে তাঁদের আসতে দেখে নিজেদের মধ্যেই মারামারির নাটক সাজিয়ে জটলা পাকায় তারা। কৌশলে সেই জটলার ভেতরে ওই দুই কর্মচারীকে ঢুকিয়ে তাদের ছুরি মেরে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার চারজন হলেন-একরামুল আলম (৩৭), সাহেদ হোসেন মনা (২৪), মো. ইয়াছিন সাব্বির (২৪) ও রবিউল হোসেন (২৩)।
এর আগে গত রোববার দিবাগত রাতে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ইয়াছিন কবির। মামলার এজাহারে তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করেন।
ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের তথ্য জানাতে আজ মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ কর্মকর্তা) স্পিনা রাণী প্রামাণিক, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু ভট্টাচার্য এবং কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর।
ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনার পর আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িত চারজনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে প্রথমে সাহেদ হোসেন মনাকে নগরীর রউফাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। মনার তথ্যানুযায়ী নগরীর মাদারবাড়ি এলাকা থেকে একরামুলকে গ্রেফতার করে তার কাছে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর পর কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাব্বির ও রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চারজনকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে মোট ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। একই ঘটনায় আরও ৪/৫ জন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ছিনতাইয়ের টাকার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পলাতক ছিনতাইকারীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড একরামুল আলম ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, বৃহত্তর রিয়াজউদ্দিন বাজার শাখা, চট্টগ্রাম’ নামে একটি নামসর্বস্ব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিপরীতে সিডিএ মার্কেটের তিনতলায় সংগঠনটির কার্যালয়। একরামুল নিজেকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ‘যুব সংগঠক’ পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে পোস্টারও শেয়ার করেছেন।
মূলত সংগঠনটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একরামুল রিয়াজউদ্দিন বাজারে হুন্ডি ব্যবসা, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের বিরোধকে ব্যবহার করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করতেন।