শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা অন্যান্য দল

নির্বাচন কমিশন এখন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে: গণতন্ত্র মঞ্চ



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ জুলাই, ২০২৩ ১:১৫ : অপরাহ্ণ

নির্বাচন কমিশনকে এখন ঠুঁটো জগন্নাথে (শক্তিমান কিন্তু কাজে অক্ষম) পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

তারা বলছেন, অনিয়মের অভিযোগে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো অর্থাৎ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরো সংকুচিত করা হলো। অনতিবিলম্বে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেয়ার আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

“গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী বিল ও সরকারের নীলনকশা” সম্পর্কে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আরপিও এর ধারা অনুযায়ী আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাতদিন আগে যাবতীয় বকেয়া বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন ক্ষুদ্রঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বকেয়া বিল একদিন আগে জমা দিলেও চলবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যাবে। এসব কারণে এই সংশোধনী কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অনতিবিলম্বে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তা না হলে এই সংশোধনী প্রত্যাহারসহ অবাধ, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী যাবতীয় ধারা ও তৎপরতা বাতিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি আদায় করবো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, গত ৪ জুলাই সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিলটি পাস করে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হলো। এই সংশোধনীর মাধ্যমে যে কোন অনিয়মের কারণে ভোট বন্ধ রাখতে এই পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল বাস্তবে তা কেড়ে নেয়া হলো। আরপিওর ৯১ (ক) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে যে তারা আইনানুগভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে তারা নির্বাচনের যে কোন পর্যায়ে ভোট বন্ধ রাখতে পারে। অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হলে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচন বন্ধ করতে পারত। এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে কেবল ভোটের দিন সংসদীয় আসনের কতিপয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখতে পারবে, পুরো সংসদীয় আসনের নয়। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনের পরিবর্তে ‘ভোট গ্রহণ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আসল ক্ষমতা ছিলো আরপিও এর ৯১ (ক) ধারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী বিল পাশ করে এখন নির্বাচন কমিশনকে প্রকারান্তরে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিনত করা হলো। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও সংকুচিত করা হলো। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে এবং জাতীয় নির্বাচনে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, এমনিতেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নানা দিক থেকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই যেখানে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের অবশিষ্ট ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার এই তৎপরতা নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারীতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব আরো বাড়িয়ে তুলবে। তদুপরি ক্ষমতাসীন সরকার যখন আর একটি সাজানো একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে তখন ভোট বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো যে পুরোপুরি দূরভিসন্ধিমূলক তাও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই যে এই সংশোধনী আনা হয়েছে তা অত্যন্ত পরিষ্কার। আর নির্বাচন কমিশন যেভাবে উপযাচিতভাবে নিজেদের ক্ষমতা কমানোর সংশোধনী হাজির করে সরকারি দলের ভোট কারচুপির রাস্তা প্রশস্ত করে দিয়েছে তা বিস্ময়কর ও আপত্তিকর। কারচুপি, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসসহ নানা কারণে একটি নির্বাচনী এলাকার সময় নির্বাচন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল এখন তা না থাকায় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের নয়ছয় করার সুযোগ আরো বৃদ্ধি পেল। এর মধ্যে দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের কুমতলবও বেরিয়ে এসেছে।

সাইফুল হক আরও বলেন, সরকারি দলের আর একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারার কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। আরপিও’র এই সংশোধনী এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দায়িত্ব দিয়েছে আরপিও’র এই সংশোধনী তারও পরিপন্থী। এর মধ্যে দিয়ে নির্বাচন কমিশননের হাত-পা বেঁধে ফেলা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর