রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

কে এই মেন্দি এন সাফাদি, কী তার মিশন!


ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদি। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৪ জুলাই, ২০২৩ ১২:১৬ : অপরাহ্ণ

ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে প্রায় সাত বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কিনা, তা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। যদিও সাক্ষাতের খবর নাকচ করে দিয়েছেন নুর।

আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নুরের সাক্ষাৎ হয়েছিল। গত ২৬ জুন মেন্দি এন সাফাদি এসএমএস দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন।

প্রথমবারের মতো মেন্দি এন সাফাদির নাম ২০১৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশে আলোচনায় আসে। তখন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন।

শিপন কুমার বসু নামের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় মেন্দির সঙ্গে আসলামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগ্রায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সে সময় মেন্দি ভারত সফর করছিলেন।

মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবর বের হওয়ার পর ওই বছরের ১৫ মে আসলামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই মামলায় এক বছর পর তিনি জামিন পান। পরে তার বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতি মামলাসহ একাধিক মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, মেন্দি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট। তবে তিনি মোসাদের এজেন্ট কিনা-এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

মেন্দিকে নিয়ে ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন ছেপেছে। এসব প্রতিবেদন থেকে তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

জানা যায়, মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা গোলান মালভূমি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ইহুদি নন। তিনি দ্রুজ ধর্মাবলম্বী। দুবাইয়ে ব্যবসা করেন।

মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থক। ইসরায়েল ২০১৮ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের জন্ম হয়। সে সময় ওই অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পান। তবে তারা কখনোই নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি। নাগরিকত্ব আইনে ফিলিস্তিনিদের আইন করে সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৯ সালে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই আইনের পক্ষে মেন্দি এন সাফাদি তার অবস্থানের কথা জানান।

মেন্দি কতটা প্রভাবশালী

মেন্দি এন সাফাদি আসলেই প্রভাবশালী ব্যক্তি কিনা, তার উত্তর পাওয়া যায় আউজ সেভা ইসরায়েলি নামে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

২০১৯ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত ‘হোয়াই লিকুদ ভোটারস শুড সাপোর্ট মাইনরিটি ক্যান্ডিডেটস’ নামে ওই লেখায় ইহুদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষায় দ্রুজরা কী ভূমিকা রাখছেন, তার বিশদ বিবরণ ছাপা হয়। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথমেই নাম ছিল আইয়ুব কারারের। মেন্দি এন সাফাদি এই আইয়ুব কারারের চিফ অব স্টাফ ছিলেন।

এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেন্দি এন সাফাদির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ব্যাপক। সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, রিসার্চ, পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস প্রতিষ্ঠা করে তিনি বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বে ইসরায়েলের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।

তিনি সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বাহিনীকে সহযোগিতা ও স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষেও জনমত গঠনের কাজ করছেন।

এমনকি তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় যুক্ত আছেন। কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে তিনি নিয়মিত ভারত, আজারবাইজান, ইউরোপ ও এশিয়ায় ভ্রমণ করেন।

মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগাযোগের খবরও প্রকাশিত হয়।

তিনি দাবি করেন, জর্ডানের একজন পাইলটকে আইএসের জিম্মা থেকে মুক্ত করতে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যদিও ওই পাইলটকে মুক্তির ব্যাপারে তার দূতিয়ালির দাবি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আইএসের সঙ্গে তার যোগাযোগ কেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। বাংলাদেশ নিয়ে মেন্দি এন সাফাদির আগ্রহের কারণ কী, আদৌ আগ্রহ আছে কিনা, তা নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা আছে। মেন্দি এন সাফাদিকে এ প্রশ্ন করলে তার জবাব দেননি তিনি।

সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান দ্য স্ক্রল-এ ২০১৬ সালের ৭ জুন মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন। ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের ব্যাপারে আদৌ ইসরায়েলের কোনো আগ্রহ আছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখে, এমন সূত্রের বরাতে প্রথম আলো বলছে, বাংলাদেশ নিয়ে ইসরায়েলের আগ্রহ আছে। তারা মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশও তাদের নজরে রয়েছে।

মেন্দি এন সাফাদি যে বেসরকারি সংস্থার পরিচালক, সেই সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বাংলাদেশের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ওপর প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিল। ওই প্রতিবেদনটির নাম ‘দ্য সিজ অব হোলি আর্টিজান ক্যাফে অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন কান্ট্রিজ ফিউচার কাউন্টার টেররিজম অ্যাফোর্ট’।

বাংলাদেশের সঙ্গে কীভাবে জড়াল মেন্দি

বাংলাদেশি নাগরিক শিপন কুমার বসুর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ মেন্দি এন সাফাদির। সাফাদি সেন্টারের ফেসবুক পেজে শিপনের সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির অনেক ছবি রয়েছে।

তিনি এক ভিডিও বার্তায় শিপনকে তার মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। যদিও তা চলতি বছরের ৭ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দিয়ে শিপন কুমার বসুকে সে পদ থেকে সরিয়ে দেন।

৭ এপ্রিলের পোস্টে মেন্দি এন সাফাদি লেখেন, ‘বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা আমাকে ও শিপন কুমার বসুকে জানেন, তাদের একটি বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিপন আমার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না এবং আমি এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমি জানি না। আমি সবাইকে সতর্ক করতে চাই যে আমার পক্ষ হয়ে কথা বলার জন্য আমি কাউকে দায়িত্ব দিইনি। আমি আশা করি, উপযুক্ত লোকজনকে দিয়ে আমি বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সক্ষম হব এবং পরিবর্তন আনব।’

মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এই অভিযোগ ছয় মাস আগে করা হয়েছিল। তখনো কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে ভাঙন ধরাতে, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, কেউ টাকাপয়সা দিয়ে লবিং-তদবির করে একটা মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়াতে পারেন। আমি যত দূর জানি, তিনি নিজেও একটি লবিস্ট ফার্ম পরিচালনা করেন।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর