প্রকাশের সময় :৬ মে, ২০২৩ ৯:০৯ : অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স চারমাস পর খোলা হয়েছে। মসজিদের ৮টি দানবাক্সে এবারও রেকর্ড পরিমাণ অর্থ মিলেছে।
এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দানবাক্সে মিললো ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়।
বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ১৯ বস্তা টাকা হয়। এরপর সেগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনার কাজ শুরু করা হয়।
টাকা গণনায় মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি চার মাস পর পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়।
এবার ৪ মাস পর ৮টি দানবাক্স খোলা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি এই মসজিদের দানসিন্দুক খোলা হয়ছিল। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন দানসিন্দুক খোলার পর সাড়ে ২০ বস্তা টাকা হয়েছিল।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপনা হিসেবে পরিগণিত হবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এ ছাড়া ৫ হাজার নারীর জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও নিলামঘরে নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরড়ি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। মানুষের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।