রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ৫:০৫ : অপরাহ্ণ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রয়েছেন।
আজ রোববার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গতকাল সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
গতকাল ভর্তি হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।
অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গতকাল ভর্তি হওয়ার পর ম্যাডামের বেশকিছু পরীক্ষা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে করা হয়েছে। ওইসব পরীক্ষার রিপোর্ট আসা শুরু করেছে। মেডিকেল বোর্ড আজকে (রোববার) সন্ধ্যায় কোনো একটা সময়ে বসবেন এবং রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে উনার পরবর্তী পর্যায়ে যে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন তা করবেন। তবে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল বোর্ড গতকাল একদফা বসে যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা নিয়েছেন। সকাল বেলায়ও বোর্ডের কয়েকজন সদস্য উনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার কিছু অসুস্থতা ছিলো… নিয়মিত চেকআপের পাশাপাশি কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিলো। যার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে এখানে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসাতে উনি মোটামুটি রেস্পন্স করছেন।’
হাসপাতালে খালেদা জিয়া ক’দিন থাকতে পারেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘এটা মেডিকেল বোর্ডের ডিসিশনের ওপর নির্ভর করবে, উনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে।
কাজেই এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোগীর অসুস্থতা সম্পর্কে মিডিয়াতে বলা ঠিক না। খালি এইটুকু জানানো যেতে পারে যে, উনার কিছু শারীরিক অসুস্থতা, উনার হার্টের জটিলতা, উনার লিভারের জটিলতা, উনার কিডনির জটিলতা- এগুলো ছিলো, আছে…আপনার জানেন। সেগুলোর কোনো কোনোটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছিলো সেজন্য উনার চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘উনি কেবিনেই আছেন। কিন্তু কেবিনে উনার জন্য স্পেশালিস্ট এমআইএসটি নার্স-ডাক্তার সাহেবরা… দেয়ার টেকিং কেয়ার অফ। কেবিনে মানে এমনি শুয়ে থাকার তা না। সি ইজ আন্ডার স্ট্রিক্ট সুপারভেশন।’
ডা. জাহিদ জানান, অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হচ্ছেন, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জিয়াউল হক এবং অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম।
এছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করছেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান সিঁথি। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান সবসময় খোঁজ রাখছেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যান খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একপর্যায়ে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে ছিলেন। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে করোনার টিকা নেয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।