শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

রাজসিক আয়োজনে বঙ্গভবন ছাড়লেন আবদুল হামিদ


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:৫১ : অপরাহ্ণ
বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গভবন গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। মাঝখান দিয়ে খোলা জিপে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

অগ্রভাগে পতাকাবাহী অশ্বারোহী দল, তাদের পেছনে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যান্ড দল বাদ্যযন্ত্রে তুলছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়’ গানের সুর। বঙ্গভবনের কর্মীরা দুই সারিতে লাল কাপড়ে মোড়ানো দড়ি ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন প্রধান ফটকের দিকে; সেই দড়ি বাঁধা ফুলে মোড়ানো এক খোলা জিপের সঙ্গে। জিপে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছিলেন আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম। দুই পাশ থেকে তখন চলছে পুষ্পবৃষ্টি।

দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন ও আনুষ্ঠানিভাবে বিদায় নেয়ার রেকর্ড গড়ে এভাবেই বঙ্গভবন ছাড়লেন মো. আবদুল হামিদ।

টানা ১০ বছর ৪১ দিন দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদকে সোমবার আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাল বঙ্গভবন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানানোয় অনন্য নজির দেখাল বঙ্গভবন।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণের পর দুপুরে শুরু হয় আবদুল হামিদের বিদায় অনুষ্ঠান। বঙ্গভবন ছাড়ার পর আবদুল হামিদ রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজ বাড়িতে ওঠেন।

বাংলাদেশে এর আগে ২০ জন রাষ্ট্রপতি বিদায় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউই এত দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় পাননি, যার রেকর্ড গড়লেন আবদুল হামিদ।

গত ১৭ এপ্রিল বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবদুল হামিদের সম্মানে এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এর আগে গত মার্চে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে বিদায়ী মতবিনিময় করেছিলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের পর দুপুর দেড়টার দিকে আবদুল হামিদের বিদায় পর্ব শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) তাকে গার্ড অব অনার ও অভিবাদন জানায়। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে এই গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর লাল গালিচায় হেঁটে গার্ড পরিদর্শন করেন আবদুল হামিদ।

গার্ড অব অনার পর্ব শেষে আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম ওঠেন ফুলে সাজানো খোলা জিপে। বঙ্গভবনের ফোয়ারা থেকে প্রতীকী কায়দায় সেই প্যারেড কারকে দুটি দড়ি ধরে টেনে মূল ফটকে নিয়ে যান বঙ্গভবনের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরারা।

এরপর প্রধান ফটক থেকে ভিভিআইপি প্রটোকলে বিদায়ী যাত্রা করেন আবদুল হামিদ। দীর্ঘ ১০ বছর পর বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জে তৈরি করা নিজের নতুন বাড়িতে যান।

বাড়িতে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘তার যেটুকু সাফল্য, সেজন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে, এলাকার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, সে জন্য তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে। কারণ তার বক্তব্য তারা ‘টুইস্ট না করে’ জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই যে রোদের মধ্যে আপনারা এসেছেন, আমার মত একজন সাধারণ মানুষের জন্য। যদিও আমি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলাম, তবুও আমি সব সময় নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ মনে করি। আমার যে রাজনীতি, সেটা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। চেষ্টা করেছি দেশে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে, আগামীতেও চেষ্টা থাকবে। দেশের মানুষ সব দিক থেকে ভালো থাকুক, সুখী থাকুক সেটি চাই।’

বাংলাদেশে এর আগে ২০ জন রাষ্ট্রপতি বিদায় নিয়েছেন। তবে কেউই কার্যত আনুষ্ঠানিক বিদায় পাননি। আবদুল হামিদকে বঙ্গভবন আনুষ্ঠানিক বিদায় জানালো। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার ও প্রটোকল দিয়ে নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দেন।

আরও পড়ুন: শপথ নিলেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর