সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

বাঙালির গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতার দিন আজ



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ মার্চ, ২০২৩ ১২:৩১ : পূর্বাহ্ণ

আজ ২৬ মার্চ ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন।

১৯৭১ সালের এই দিনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন..।’

বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিকামী মানুষ।

মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।

আজ রোববার বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দিবসটি উদযাপন করবে।

গোটা জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। অবনতচিত্তে শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও স্বাধীনতার ঘোষণাকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আরও স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী চার জাতীয় নেতা এবং ৯ মাসে অসামান্য আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। সেই সঙ্গে গোটা দেশ আজ মেতে উঠেছে স্বাধীনতার উৎসবের আমেজে।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।

কর্মসূচি

আজ ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকাসহ সারাদেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।

সূর্যোদয়ের ক্ষণ ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন অমর শহীদানের প্রতি। এর পর সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাও সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

সকাল পৌনে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন তিনি। এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘মুজিবস বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনশীর্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপকে জাতীয় ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।

আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে–আজ সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও পৌনে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আগামীকাল সোমবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।

বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে–আজ ভোরে সারাদেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে সমাবেশ।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বঙ্গবন্ধ পরিষদ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), খেলাঘর, কচিকাঁচার মেলা এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, নারী, শিশু ও পেশাজীবী সংগঠন দিনব্যাপী বিস্তরিত কর্মসূচি পালন করবে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর