রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২০ মার্চ, ২০২৩ ১০:১০ : পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বাগান বিলাস গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, গোধূলি বেলাসহ একাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শুধু মাঠের জায়গা নয়, পথচারীদের হাঁটার জন্য তৈরি করা সড়কের ফুটপাত ও সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট দখল করে গড়ে উঠেছিল বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টটি।
অবৈধভাবে গড়ে উঠা বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টের মালিকদের একজন হলেন সাংবাদিক নামধারী আয়ান শর্মা। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিন নামে একটি পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক।
এই অবৈধ রেস্টুরেন্টের আরও চার অংশীদার রয়েছেন। এরা হলেন-এমএ হোসাইন বাদল, অসিত সেন, হোসাইন তৌফিক ইফতেখার ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরী।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ২০১৯ সালে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ফিউশন ডিজাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে মাঠের পূর্ব ও উত্তর অংশ পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেন।
নাগরিক সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন ও শোভাবর্ধনের শর্তে লিজ দেওয়া হয়। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে শর্তের বাইরে গিয়ে গড়ে তোলা হয় বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টটি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেটটি বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলার কারণে সাধারণ মানুষ সেটি ব্যবহার করতে পারতো না। রেস্টুরেন্টের সামনের ফুটপাতে সাধারণ মানুষ দাঁড়ালে তাদের নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হতো। কোনো ধরনের যানবাহন সেখানে পার্কিংও করতে পারতো না।
আরও পড়ুন: দখল-চাঁদাবাজ চক্রে সাংবাদিক নামধারী আয়ান শর্মা
সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মিত এসব রেস্টুরেন্ট ও আশপাশের জায়গা সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয় বখাটে ও মাদকসেবীদের আখড়ায়। সড়কের অপর পাশে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের অবস্থানের কারণে পুরো বিষয়টি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে প্রশাসনের জন্য।
আউটার স্টেডিয়ামের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খেলার মাঠ দখলমুক্ত করায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল।
নগরীর কাজীর দেউড়ি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে এক সময় নিয়মিত খেলার চর্চা হতো। পরবর্তী সময়ে মাঠগুলোতে মেলাসহ নানা আয়োজন চলতো বছরজুড়েই। পাশাপাশি মাঠের জায়গা দখল করে আশপাশে গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা।
মেলা ও অবৈধ স্থাপনার কারণে এই খেলার মাঠ অকার্যকর স্থাপনায় পরিণত হয়। এতে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো শিশু-কিশোররা।
বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর খেলার মাঠ উদ্ধারের দাবি উঠে। এ নিয়ে অনেক সংগঠন আন্দোলনও করে। শেষ পর্যন্ত খেলার মাঠ রক্ষায় টনক নড়লো চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের।
সম্প্রতি আউটার স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে সব ধরনের মেলা বন্ধের ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
এরপর গত ২ মার্চ আউটার স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে মাঠ উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা জানান তিনি। নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে ১৫ দিন সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু দখলদাররা তা আমলে না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং।
অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে এখানে খেলা ছাড়া অন্য কোনো কিছু চলবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিসি ও সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক মাঠটি পরিদর্শন করেন। দুই মাস আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর একাধিকবার তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি। তাই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।
এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আউটার স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলার মাঠ, এখান থেকে অনেক জাতীয় খেলোয়াড় ওঠে এসেছেন। তাই মাঠটি আমরা খেলার জন্য ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। মাঠের চারদিকে দেওয়াল দিয়ে রক্ষার পাশাপাশি খেলার উপযোগী করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
আরও পড়ুন: কয়লা আয়ান শর্মার ময়লা যায়নি