রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৮ মার্চ, ২০২৩ ১:২৪ : অপরাহ্ণ
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো মানুষ আটকা পড়ে আছে কিনা তা খুঁজতে র্যাবের ডগ স্কোয়াড আনা হয়েছে।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিধ্বস্ত ভবনের পাশে একটি গলিতে র্যাবের কয়েকজন সদস্যকে ডগ স্কোয়াডের কয়েকটি কুকুর নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
এদিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স উপপরিচালক (জনসংযোগ) শাহজাহান শিকদার জানান, পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি তিন সদস্যের নাম পরে জানানো হবে। কমিটিকে আগামী পাঁচ দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের নর্থসাউথ সড়কের সাততলা ভবনে বিস্ফোরণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগকেই বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবন থেকে মৃত বের করে আনা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হন শতাধিক মানুষ।
বিধ্বস্ত ওই সাততলা ভবনের বেজমেন্টে এখনো ঢুকতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে আরও মানুষ আটক থাকতে পারেন বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তখন নর্থসাউথ সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল করছিল। সদরঘাট থেকে গুলিস্তানগামী এ সড়ক ঢাকা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। বিস্ফোরণের পর সড়কের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেক মানুষ পড়েছিলেন। তাদের অধিকাংশই তখন সড়ক দিয়ে চলাচল করছিলেন। তাদের কেউ বাসের যাত্রী, কেউ রিকশা-ভ্যানে যাচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন পথচারী। কেউ কেউ দোকানে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে একটি ভাসমান চায়ের দোকান চালান সোহরাব হোসেন। বিস্ফোরণের সময় তিনি দোকানে ছিলেন। তিনি মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলের সামনের কিছু দৃশ্যের ভিডিও করেছেন।
সোহরাব হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের পর তার মনে হয়েছিল বোমা ফুটেছে। তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, বহু মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন। তাদের কেউ কেউ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। এসব মানুষকে রিকশা-ভ্যানে করে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিস্ফোরণের পর ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও সরবরাহ করেছেন সোহরাব হাসান।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সড়কে একটি নিথর দেহ পড়ে আছে। একটি ভিডিওতে ষাটোর্ধ্ব একজনের ছিন্নভিন্ন লাশ ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। অন্য একটি ভিডিও দেখা গেছে, স্থানীয়রা আহত কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন।
চা দোকানদার সোহরাব হাসানের ভাষ্য-ঘটনার সময় সড়কে যানজট ছিল না। সদরঘাটের দিক থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলছিল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই দুটি বাসের যাত্রী ছিলেন। আহত ব্যক্তিরা তখন শুধু বাঁচার জন্য সহায়তা চেয়ে আর্তনাদ করছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, বিস্ফোরণ হয়েছে নর্থসাউথ রোডের ১৮৪ নম্বর ভবনে। ভবনটি সাততলা। ভবনের বেজমেন্ট, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বেজমেন্ট ছাড়া পুরো ভবনেই তল্লাশি চালিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাততলা ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার সামনের অংশ ভেঙে মূল সড়কে এসে পড়েছে। সাততলা ভবনটির উত্তর পাশে ১৮০ নম্বর ভবন। এ ভবন পাঁচতলা। ভবনের নিচতলার একটি দোকান পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ভবনেরও প্রতি তলার জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণ স্থলের ভবন লাগোয়া দক্ষিণ পাশের সাততলা আরও একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের নিচতলার সিঁড়ির অংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ভবনের উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভবনের বেজমেন্টে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয়। তাই উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার সকালে সেনাবাহিনী এলে ফের উদ্ধারকাজ শুরু হবে।