রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ মার্চ, ২০২৩ ৯:৩৭ : পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) ঠিকাদারদের মারধরের শিকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী গত এক মাস ধরে তার দপ্তরে আসছেন না। এই প্রকৌশলী এখন ঢাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অফিস করছেন। তিনি আর চসিকে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে চসিকের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীকে গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে তার প্তরে ঢুকে মারধর করেন একদল ঠিকাদার। এ সময় প্রকল্প পরিচালকের টেবিল ও নামফলক ভেঙে ফেলা হয়। অভিযুক্ত ঠিকাদাররা এ প্রকল্পের কাজ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোলাম ইয়াজদানীকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় জড়িত ১০ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ওই দিন রাতে নগরীর খুলশী থানায় একটি মামলা হয়। তবে মামলার বাদী হননি গোলাম ইয়াজদানী। সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিন ঠিকাারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা এখন কারাগারে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এভাবে দায়িত্ব পালনের কারণে অসৎ ঠিকাদাররা অন্যায় সুবিধা নিতে না পেরে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
পরে এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ঠিকাদারদের মালিকের ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সিটি করপোরেশন।
প্রকল্পটির পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী হামলার দিন রাতেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। এরপর তিনি আর চসিকে অফিস করতে আসেননি। গোলাম ইয়াজদানী আর চসিকে আসবেন না বলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের দায়িত্ব ওেয়া হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে। গত বছরের ১৪ আগস্ট তাকে চসিকের এই প্রকল্পের সংযুক্তিতে বদলি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর সড়ক, নগরীর বিভিন্ন স্থানে ওভারপাস, ওভারব্রিজ, রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ এবং গোলচত্বরসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজ রয়েছে।
কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে এখন সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ হলো ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রকল্পটির পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী চসিক ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি।
এ অবস্থায় প্রকল্পটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকতারা।
মো. গোলাম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমি এখন এলজিইডিতে অফিস করছি। আমি আর চসিকে যাবো না। বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।’
প্রকল্পটির এখন কী হবে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানী আর চসিকে আসবেন না বলে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা তাকে অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল।’
এই প্রকল্পের এখন কী হবে?-এই প্রশ্নের উত্তরে চসিকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ এটি সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্পটি নিয়ে আমরা এখন সংকটের মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। হয়তো নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা?-এই প্রশ্নের জবাবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা বলেন, ‘ নির্দিষ্ট সময়ে যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’
গতকাল রোববার দুপুরে টাইগারপাস সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় গিয়ে খো যায়, প্রকল্প পরিচালক ‘প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ৪১০ নম্বর কক্ষটি বন্ধ। নামফলকটি এখনো ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এ সময় সেখানে দেখা হয় অফিস সহায়ক তিলক সিংহের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে প্রকল্প পরিচালকের কক্ষটির তালা খুলে ভেতরে নিয়ে যান। কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, প্রকল্প পরিচালকের ভাঙচুর করা টেবিল ও চেয়ারের কাচ এখনো সেখানে পড়ে আছে। এগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি।
অফিস সহায়ক তিলক সিংহ বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে স্যার (গোলাম ইয়াজদানী) আর অফিসে আসেননি। এর মধ্যে আমার সঙ্গে ফোনে দুয়েকবার কথা হয়েছে। শুনেছি, তিনি আর আসবেন না।’