বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি

রাশেদকে নিয়ে আপত্তি নেই, প্রশ্নের মুখে শাহজাহান


এস এম রাশেদুল আলম ও মো. শাহজাহান।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ৯:১৫ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে সিনিয়র নেতাদের ডিঙিয়ে জুনিয়র নেতাদের শীর্ষ পদে স্থান দেওয়া হয়েছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহানকে নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন  নেতাকর্মীরা। তবে সভাপতি ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলমকে নিয়ে আপত্তি নেই নেতাকর্মীদের।

গত সোমবার রাতে যুবলীগের কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার ৩২ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের ৮ মাস পর এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

গত বছরের ২৯ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সরকারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে যুবলীগের সভাপতি পদে ৭ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন প্রার্থী ছিলেন।

সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন বসলেও তাতে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়নি। কেন্দ্রের হাতে নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনের ভার ছেড়ে দেন কাউন্সিলররা। অবেশেষে সম্মেলনের ৮ মাস পর কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হলো।

কিন্তু কমিটি ঘোষণার পরপরই দুজন সহসভাপতি পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন-মো. নুরুল মোস্তফা মানিক ও রাজিবুল আহসান সুমন।

কাঙ্খিত পদ না পাওয়া ও তাদের ডিঙিয়ে জুনিয়র নেতাদের শীর্ষ পদে স্থান দেওয়ার জেরে তারা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

কমিটির সহসভাপতি পদে স্থান পাওয়া এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, যাকে এক নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে তিনি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও বয়সে অনেকের ছোট। এ ছাড়া আরও অনেক পদে সিনিয়র নেতাদের ডিঙিয়ে জুনিয়র নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের জন্য এটা অপমানজনক।

প্রশ্নের মুখে শাহজাহান
মো. শাহজাহান হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এস এম আল মামুনের ঘনিষ্ঠ। তবে শাহজাহান সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হলেও সম্মেলনকে ঘিরে কোনো আলোচনায় ছিলেন না। সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি ‘চমক’ দেখালেন।

নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না শাহজাহান। এমনকি সম্মেলনে একটা মিছিলও নিয়ে যাননি তিনি।

কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়া সামসুদ্দোহা সিকদার আরজু প্রশ্ন রাখেন, ‘যিনি সম্মেলনে একটা মিছিল পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেননি, তাকে কীভাবে সাধারণ সম্পাদক বানানো হলো?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শাহজাহান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি, জেলও খেটেছি। আমি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সবসময় সক্রিয় ছিলাম। দলের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করার পরও আমার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠবে? যুবলীগের চেয়ারম্যান সবকিছু বিবেচনা করে আমাকে যোগ্য ও বিশ্বস্ত মনে করেছেন বিধায় আমার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন।’

কী কারণে শাহজাহানকে বেছে নিলো কেন্দ্র?
যুবলীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, সামনে সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপি আবারও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। এটা মাথায় রেখে সীতাকুণ্ডে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য শাহজাহানকে যুবলীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। তার নেতৃত্বে সীতাকুণ্ডে যুবলীগ বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করবে।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে জোরালো আলোচনায় ছিলেন সন্দ্বীপের মিজানুর রহমান। তিনি আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তার বাড়ি সন্দ্বীপ হওয়ার কারণে কপাল পুড়ে যায়। সামনে চট্টগ্রামে বিএনপির আন্দোলনকে মোকাবেলা করার বিষয়টি মাথায় রেখে চৌকস ও সক্রিয় নেতাদের হাতে উত্তর জেলার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে।

আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ
জেলা যুবলীগের আগের কমিটির সভাপতি এস এম আল মামুন ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা। আর সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম ছিলেন হাটহাজারীর বাসিন্দা। তারা ২০১৩ সাল থেকে দীর্ঘ ৯ বছর যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাকতালীয়ভাবে এবারও সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারী থেকে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

এ নিয়ে কমিটির অনেক নেতা আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন।

কমিটির সহসভাপতি রাঙ্গুনিয়ার সামসুদ্দোহা সিকদার আরজু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘অন্য উপজেলায় কি যোগ্য নেতা নেই? বারবার হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড থেকে কেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো হবে?’

বিতর্কের উর্ধ্বে রাশেদুল আলম
উত্তর জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের বিতর্কের উর্ধ্বে আছেন সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম। মেধাবী এই পরিচ্ছন্ন নেতাকে নিয়ে কোনো অভিযোগের কথা শোনা যায়নি। নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, যোগ্য নেতা হিসেবে রাশেদুল আলম তার কাঙ্খিত পদ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সম্মেলনের পর কমিটি নিয়ে নানা সমীকরণের কথা শোনা গেলেও আমার নিজের প্রতি শতভাগ আস্থা ছিল। কারণ এর আগে দীর্ঘ ১০ বছর নেতৃত্বে থেকে আমি সংগঠনকে ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করিনি। যে কারণে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আবার আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন।’

অবশ্য সম্মেলনের আগে থেকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া নিয়ে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ছিল রাশেদুল আলমের। সম্মেলনের আগে রাজনীতি সংবাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নিজের প্রতি শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস আছে।’ গত বছরের ১৫ মে রাজনীতি সংবাদে ‘যুবলীগের সভাপতি পদেও তদবির ছাড়াই বাজিমাত করতে চান রাশেদ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: যুবলীগের সভাপতি পদেও তদবির ছাড়াই বাজিমাত করতে চান রাশেদ

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর