শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

রূপপুরের সরঞ্জাম নিয়ে ভারতের বন্দরেও ভিড়তে পারেনি সেই রুশ জাহাজ


মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত রুশ জাহাজ ‘স্পার্টা ৩’

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৩৪ : অপরাহ্ণ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম খালাস না করেই ভারতের জলসীমা ছেড়ে গেছে উরসা মেজর নামধারী জাহাজ ‘স্পার্টা ৩’। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকায় ভারতের বন্দরে ভিড়তেও পারেনি জাহাজটি।

প্রায় দুই সপ্তাহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করেছিল জাহাজটি। কিন্তু পণ্য খালাসের জন্য জাহাজটি নয়াদিল্লির অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায় জাহাজটি।

সেদিনই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, উরসা মেজরের পরিবর্তে এখন অন্য জাহাজে করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়।

প্রসঙ্গত, উরসা মেজর নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি ওই পণ্য নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

এর আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। রং ও নাম বদল করে সেটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে।

জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা-৩’-এর সনদ নম্বর।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ওই জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, জাহাজের নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে ওই দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথ্যটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানায়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জাহাজটিকে বাংলাদেশের কোনো বন্দরে ভিড়তে দিতে রাজি হয়নি। তারা পূর্বের অনুমতি বাতিল করে।

পরে জাহাজটি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। সংশ্নিষ্ট স্থানীয় এজেন্ট সেখান থেকে পণ্য বাংলাদেশের রূপপুরে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা যায়। তবে তাও সম্ভব হয়নি।

তাৎক্ষণিক জাহাজের অবস্থান শনাক্তকরণ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের ১৫ জানুয়ারি সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝসমুদ্রে নোঙর করেছিল।

তবে বুধবার সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, জাহাজটি ভিড়তে না দেওয়ায় সেটি রাশিয়ার উদ্দেশে ফিরে যাচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিব্রত অবস্থায় রয়েছে রাশিয়া। বাংলাদেশ সরকারের সমস্যা বুঝতে পারছে দেশটি। ভারতের বন্দরে শুধু জাহাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরঞ্জাম নামাতে দেওয়া হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনীতিক জানান, ভারতের বন্দরেও জাহাজটির পণ্য খালাসে বাদ সেধেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের ওপরও চাপ প্রয়োগ করেছে তারা। ফলে দিল্লি জাহাজটি থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পড়ে উভয় চাপে। মার্কিন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোনো জাহাজকে তৃতীয় দেশ সুযোগ-সুবিধা দিলে সেই দেশও নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়বে।

আবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাহাজটি খালাস না হতে দিলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাহাজটি বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও ভারত বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাহাজের পণ্য খালাসের ঝুঁকি নেয়নি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর