বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৬ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি: ক্ষমা চাইলেন শিল্পপতি নাদের খাঁন


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ৫:৩৩ : অপরাহ্ণ
চিটাগং ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান নাদের খাঁন।
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে একটি মসজিদের মাইকে উচ্চস্বরে আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছিলেন চিটাগং ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন। তাদের এই চিঠি নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। মুসল্লিদের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন শিল্পপতি দম্পতি।

আজ শুক্রবার জুমার আগে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডিসি উত্তর মোখলেসুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন ঘটনাটির জন্য লিখিতভাবে ক্ষমা চান।

এ সময় সেখানে পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটি ও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর কমিটির কর্মকর্তারা পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদে জুমার সময় মুসল্লিদের কাছে নাদের খাঁনের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হয়।

পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খাঁন রাজনীতি সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মাইকে আজান দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলার কারণে শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটি।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নাদের খাঁন দম্পতি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদের মাইকে উচ্চস্বরে আজান দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তিনি ওই এলাকায় বসবাস করেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়। তিনি পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগানের কর্ণধারও এই শিল্পপতি।

জানা যায়, মসজিদের মাইকে আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী গত ১৪ ডিসেম্বর পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদের সেক্রেটারি বরাবরে লিখিত একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠি লিফলেট আকারেও এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়।

চিঠির বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মুসল্লিরা। এই চিঠি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় অনেকে নাদের খাঁনের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি: ক্ষমা চাইলেন শিল্পপতি নাদের খাঁন

মসজিদের সেক্রেটারি বরাবরে সেই চিঠিতে লেখা হয়, ‘আপনার নিকট এবং কমিটির অন্যান্য সম্মানিত সদস্যের নিকট বারবার অনুরোধ করেও এই পর্যন্ত শোনার ও বোঝার চেষ্টা করছেন না-আমাদের এই এলাকায় একই সাথে ৮-৯টি মসজিদ হতে আজান শোনা যায়। অথচ আপনারা কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে, আপনারা যেহেতু দূরে থাকেন, শোনার সুবিধার জন্য মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে রাখেন। এই বিষয়টি আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।’

চিঠিতে আরও লেখা হয়, ‘শুক্রবারে মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়। আপনাদের অনুরোধ করেছি-এই আওয়াজ আপনারা মসজিদের ভেতরে রাখেন। কিন্তু এই পর্যন্ত তাও হলো না! অনেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অসুবিধা হতে পারে, অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে— অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে- সবচেয়ে বড় কথা বিকট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না।’

সৌদি আরবে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে উচ্চস্বরে মাইকের ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খাঁন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মসজিদের মাইক নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের জন্য আজান দেওয়া হয়। এটা তো কারও জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে না। এলাকায় অনেক অমুসলিম লোক থাকেন, তারা তো কোনো দিন মাইকে আজানের আওয়াজ নিয়ে আপত্তি করেননি। আর জুমার দিন মসজিদের বাইরে মাইক বন্ধ রাখলে হুজুরের বয়ান বাসায় থাকা মহিলারা শুনতে পারবে না। মহিলারা ওয়াজ না শুনলে আমল করবে কীভাবে?’

মাইকে আজানের আওয়াজ নিয়ে কেন আপত্তি তুলেছিলেন জানতে চাইলে শিল্পপতি নাদের খাঁন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি কিন্তু আজানের সময় মাইক বন্ধের কথা বলিনি। আওয়াজ একটু কমাতে বলেছিলাম। তারা আমার চিঠির বিষয়টা বিকৃত করে অপপ্রচার করেছে। অনেকেই জানে না, ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরবের মসজিদে মাইক ব্যবহার সীমিত করে আইন পাশ হয়েছে। এই আইন পাশের পর সেখানকার মসজিদের মাইকের ভলিউম আগের চেয়ে এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে দেওয়া হয়।’

রাসূলের (সা.) একটি হাদিসের উপর ভিত্তি করে আইনটি চালু করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাদিসটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.) বলেন, মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে নিঃশব্দে পালনকর্তাকে ডাকবে। আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে একজন অপরজনকে কষ্ট দিবেনা এবং কারো তেলাওয়াত বা প্রার্থনার আওয়াজ যেন অন্যজনের কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু না হয়।’

জুমার দিন মসজিদের বাইরে মাইক বন্ধ রাখতে বলার কারণ জানতে চাইলে নাদের খাঁন বলেন, ‘ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাসর রাতে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। আমার মেয়ের দেনমোহর ধার্য করেছিলাম মাত্র এক লাখ টাকা। বরপক্ষ এটা শুনে হতবাক হয়ে যায়। আমি বলেছিলাম, বিয়ের সময় এই দেনমোহর পরিশোধ করে দিতে হবে। আমার মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি না থাকলে এটা কীভাবে পালন করলাম? হুজুররা তো ওয়াজে এটা বলে থাকেন কিন্তু কতজন এটা আমল করেন? মূলত মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে জুমার খুৎবা দেওয়া হয়। তাই আমি মাইকের আওয়াজ মসজিদের ভেতরে রাখতে বলেছি।’

আরও পড়ুন: আজান দেওয়ার সময় মুয়াজ্জিন কানে হাত দেয় কেন?

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর