চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সন্দ্বীপ থেকে আসা আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেন।
এমপি মিতার লাল কালির ক্রস চিহ্ন ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল-‘জালেম মুক্ত সন্দ্বীপ চাই, কমিশন খোর মুক্ত সন্দ্বীপ চাই, দুর্দিনের নেতা কর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের অবসান চাই।’
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সবুজ টি-শার্ট পরা সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগের এসব কর্মীরা বিশাল মিছিল নিয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রবেশ করেন।
পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভায় সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগ কর্মীদের এসব প্ল্যাকার্ড উপস্থিত নেতাকর্মীদের নজর কাড়ে।
জনসভার মাঠে সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগ কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগানও দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগের এসব কর্মীরা পৌরসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাফরুল্লাহ টিটুর অনুসারী।
জনসভাস্থলে ‘জালেম মুক্ত সন্দ্বীপ চাই’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হায়দার আলী নামে একজন কর্মীর সঙ্গে কথা হয় রাজনীতি সংবাদের। তিনি
তিনি নিজেকে সন্দ্বীপের ৬ নম্বর কালাপানিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন।
এমপি মিতাকে কেন ‘জালেম’ বলা হচ্ছে-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি সন্দ্বীপের দুঃসময়ের তৃণমূল কর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করেন। তিনি সন্দ্বীপ উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগকে জিম্মি করে দুঃসময়ের তৃণমূল কর্মীদের বের করে দিয়েছেন। তৃণমূল কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। এসব কারণে আমরা তাকে জালেম বলছি।’
‘কমিশন খোর মুক্ত সন্দ্বীপ চাই’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জনসভায় আসা এক যুবক পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, ‘সন্দ্বীপের এমপিকে কমিশন না দিয়ে এলাকায় কেউ কোনো কাজ করতে পারেন না। সব প্রকল্প থেকে তিনি কমিশন নেন।’
সন্দ্বীপ থেকে আসা এক আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সন্দ্বীপের এমপি জগদ্দল পাথরের মতো দুঃসময়ের তৃণমূল কর্মীদের ওপর চেপে বসেছেন। অথচ সবকিছু জেনেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে সন্দ্বীপ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাফরুল্লাহ টিটু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সন্দ্বীপে আমরা যারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কর্মী তারা সবাই একত্রিত হয়ে পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় গিয়েছি। এমপির অপকর্ম নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড জনসভায় প্রদর্শন করে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ এমপির হাতে জিম্মি। তিনি দলের দুঃসময়ের কর্মীদের সংগঠন থেকে বিতাড়িত করেছেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি ত্যাগী তৃণমূল কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। গত ১০ বছরে দলের দুঃসময়ের কর্মীদের ৬৯টি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা রাজনীতি সংবাদের কাছে দাবি করেন, পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের এসব স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড তার নজরে আসেনি।
নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কর্মীদের আমি নির্যাতন কেন করবো? নির্যাতনের প্রশ্নটা আসেই বা কীভাবে? এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি যদি কর্মীদের ওপর নির্যাতন করে থাকি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কি দেখছে না?’
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে ‘দেশনেত্রী’ সম্বোধন করলেন এমপি লতিফ
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসমুদ্র