প্রতিনিধি, সিলেট প্রকাশের সময় :১৯ নভেম্বর, ২০২২ ১১:১৪ : পূর্বাহ্ণ
সিলেটে প্রায় ৯ বছর আগে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছিল বিএনপি। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচনের আগে সেখানে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এই ৯ বছরে সিলেটে আর বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। তবু নয় বছর আগের চাইতে এবার সিলেটে আরও বড় জমায়েত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
আজ শনিবার দুপুর ২টায় সিলেট আলীয় মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হতে যাচ্ছে।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিশেষ অতিথি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শুক্রবার রাতে গণসমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছেন।
আজ ভোর থেকে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে গতকাল শুক্রবারই পুরো মাদ্রাসা মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
গতকাল সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা মানুষ, যারা মাঠের বাইরে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার বা স্বজনদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন, তারা আজ ভোর থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেছেন।
বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে সিলেট নগরী।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ রূপ নেবে জনসমুদ্রে।
সমাবেশস্থলে গিয়ে জানা গেছে, বিকল্প যানবাহন ব্যবহার করে নানা ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সিলেটের গণসমাবেশে পৌঁছান। গত তিনদিন ধরেই সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন তারা। গতকাল শুক্রবার রাতে সমাবেশস্থল লোকারণ্যে পরিণত হয়।
সমাবেশে যোগ দিতে বিভাগীয় চারটি জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ ও সিলেট থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ইতোমধ্যে নগরীতে পৌঁছেছেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সিলেটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকেই বিভাগের আওতাধীন সব জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের তিন চাকার গাড়ি, মোটরবাইক, এবং মাইক্রোবাস, ট্রেন, ট্রাক, লঞ্চ ও নৌকা এবং ছোট যানবাহন যেমন হিউম্যান হলার, অটোরিকশায় করে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা গেছে।
গণসমাবেশে যোগ দিতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে নৌকায় চড়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলেই সিলেট এসে পৌঁছান মো. মাসুক মিয়া। হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে রাতের খাবার খেয়ে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে শুয়ে-বসে কাটিয়েছেন রাত।
মাসুক মিয়া বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে শান্তিতে নেই। সবকিছুর দাম বাড়তি, সংসার চলে না। প্রতিবাদ জানাতে আসছি সিলেট। আজ সকালে রওনা দিয়ে আসতাম। কিন্তু ধর্মঘট দিয়ে দিছে। তাই গতকাল নৌকায় এসেছি।’
সমাবেশের প্রস্তুতি কার্যক্রম তদারককারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বাস ধর্মঘটের কারণে সম্ভাব্য বাধা ও চ্যালেঞ্জ এড়াতে মঙ্গলবার থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে সিলেটে আসছেন। গত তিন দিন ধরে সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছে এবং তারা সেখানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। এটি একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ট হওয়ায় অনেক সাধারণ মানুষ সমাবেশে যোগ দিতে আসছেন। তারাও দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়।’
এদিকে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট এবং সিলেট জেলায় অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগ।
শনিবার সকাল থেকে সিলেট জেলার বাস ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট নগরী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ও ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট শুরু করা হয়েছিল। তবে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক বাধা অতিক্রম করে সমাবেশে অংশ নেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইউম বলেন, ‘সরকারের চাপে পরিবহন সংগঠনগুলো ধর্মঘট ডেকেছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই দলীয় নেতাকর্মীদের জনসমাগম ঠেকাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: সমাবেশের আগের রাতেই ভরে গেছে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ