রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৪ নভেম্বর, ২০২২ ৯:৩১ : পূর্বাহ্ণ
সকাল ৬টা। শিশির ভেজা ঘাস। তখনো সূর্য উঠেনি। হালকা কুয়াশা। কিছুটা শীত পড়ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলস পার্ক) চারপাশে কাঁথা-বালিশ মুড়িয়ে শুয়ে আছেন শত শত মানুষ। কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউবা আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠছেন। মাঠের চারদিকে হাঁটাহাটি করছেন কেউ কেউ। কোথাও আবার দলবদ্ধভাবে আড্ডা আর খোশ গল্পে মেতে উঠছেন সাধারণ মানুষ। হকাররা চা, বিস্কুট,পান-সুপারি নিয়ে পসরা সাঁজিয়ে বসেছেন।
আগামীকাল শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। সেই সমাবেশে অংশ নিতে পথে পথে নানা বাধা উপেক্ষা করে ২-৩ দিন আগেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা।
রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মাঠেই রাত্রিযাপন করেছেন । হোটেলে থাকার জায়গা না পেয়ে রাতে বিএনপির সমাবেশস্থলসহ মাঠ ও ফুটপাতে ঘুমিয়েছেন। তাদের বেশিভাগই ভোলা,পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা থেকে আসা বিএনপির কর্মী-সমর্থক।
বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, গণসমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন।
রাতে তারা উদ্যানের চারপাশে মিছিল করেছেন। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো উদ্যান।
আরও পড়ুন: ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর মতো আমাদেরও বিপদ হতে পারে: শেখ সেলিম
অনেকে মঞ্চের সামনে শামিয়ানা টানিয়ে তার নিচে অবস্থান করেছেন। মঞ্চের সামনে চলছে রান্নাবান্না।
সমাবেশস্থলে অবস্থানরত বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা জানান, গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় আগেভাগেই চলে এসেছেন তারা। রাত্রিযাপনের জন্য কাঁথা বালিশ ও বিছানাপত্রও নিয়ে এসেছেন। খাবারের জন্য চাল, ডাল, তেল নিয়ে এসেছেন। মাঠেই রান্না করে খাচ্ছেন। কেউ কেউ আশপাশের ছোট ছোট হোটেলে রান্না করে খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে আবার জেলে পাঠাবো, বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী
এদিকে অনেকেই বরিশাল নদী বন্দর, লঞ্চঘাট, নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও বাসস্ট্যান্ডে রাত্রিযাপন করেন।
ভোলার তজুমুদ্দিন থেকে আসা নোয়াব আলী বলেন, গণপরিবহন বন্ধ, লঞ্চ বন্ধ। সমাবেশে যোগ দিতে দুদিন আগেই বরিশাল আসি। আসার পথে নানা জায়গায় বাধা দিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। রাতে সমাবেশস্থলের সামনে মাঠের মধ্যে ঘাসের উপর বিছানা করে ঘুমিয়ে ছিলাম। সারারাত শীতে কষ্ট করেছি। হাজার হাজার মানুষ আমার মতো কষ্ট করে রাত কাটিয়েছে। তবুও আমাদের প্রত্যাশা সমাবেশ সফল হোক। আমাদের দাবি দাওয়া পুরণ হোক। সরকারের পরিবর্তন হোক।
বাস-লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হলেও সকল বাধা উপেক্ষা করে মানুষের স্রোত নামছে। লঞ্চ বন্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ ভোলার বিভিন্ন ঘাটে আটকে আছেন। তাদের কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে নদী পাড়ি দিয়ে সমাবেশে আসছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। তবুও আসছেন।
পটুয়াখালীর দিনমজুর আনসার আলী। রাজনৈতিক দলের কোন পদ-পদবীতে নেই তার নাম। তুবও দুদিন আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আসেন। মাঠে বালির উপর বিছানা করে রাত্রিযাপন করেন। বিছানা-বালিশ কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে নিয়ে মিছিল করেন।
তিনি বলেন, আমার কোনো দল নেই। অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপির সমাবেশকে সমর্থণ করতে এসেছি। এখানে যারা আসেন সবাই নেতা না। বেশিভাগ মানুষ খেতে-খামারে, নদীতে কর্ম করে জীবন যাপন করছেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ট হয়ে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ চায়।