রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ইসলামী দল

নতুন দল বিডিপির সঙ্গে কি জামায়াতের সম্পর্ক আছে?



প্রকাশের সময় :২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১০:০৭ : পূর্বাহ্ণ

দেশে হঠাৎ আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামের একটি রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক আছে কি? এ প্রশ্নে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিকট অতীতে বিডিপির কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে দলটি। নতুন এ দলের নেতাদের অনেকে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে প্রশ্নটি আরও জোরালো হয়েছে।

অবশ্য বিডিপির নেতারা পরিচিত কেউ নন। নিবন্ধনের জন্য ইসিতে ১৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির তালিকা দিয়েছে তারা। তাদের বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দলটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আনোয়ারুল ইসলাম একসময় বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে জামায়াতের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। তবে দলটির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেন বিপিডির মূল নেতা।

আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জহুরুল হক হলে ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। একসময় ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। এরপর লম্বা সময় সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানেও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

আনোয়ারুল ইসলাম দাবি করেন, ২০১৮ সালে দেশে ফেরার পর থেকে কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনি। তবে সৌদি আরবে থাকার সময় থেকেই এ নেতা জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দলটির একাধিক সূত্র এমন তথ্য দিয়েছে।

নতুন দল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল নিজামুল হক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্র সংগঠনটির ভেতরে সমস্যার কারণে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির মজলিশে শুরার সদস্য হন তিনি।

তবে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়কে অতীত বলে দাবি করেন বিডিপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল নিজামুলসহ অন্যরা।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নতুন দলের কারও ব্যক্তিগত অতীত টেনে আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যারা আছেন, তাদের কেউ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন, কেউবা ছাত্রদলের রাজনীতিতে ছিলেন। বিভিন্ন দল, হয়তো শিবিরের ভাইয়েরাও আমাদের সঙ্গে আছেন।

তিনি বলেন, অন্য ছাত্রসংগঠন করলে নতুন দল করা যাবে না-সংবিধান বা রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এরকম কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকার বিষয় আমরা খঁজে পাইনি।

জামায়াতের সঙ্গে বিডিপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন এ নেতা।

নিজের সমর্থনে বক্তব্য দিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তাদের দলের গঠনতন্ত্রে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই।

তিনি বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখা, রাজনৈতিক এবং জাতীয় ঐক্য করা, সামাজিক সমস্যার সমাধান-এসবই আমাদের মুখ্য বিষয়। ইসলামিক রাজনীতি সম্পর্কে কোনো একটা শব্দ দলের গঠনতন্ত্রে খুঁজে পাবেন না।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৮ সালে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। সেই নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

বছর দুয়েক আগে দলের নাম পরিবর্তন করাসহ সংস্কার করতে একটি কমিটি গঠন করে জামায়াত।

অনেকে বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখন বিভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছে দলটি। সেই পটভূমিতে বিডিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে কি না-সেই প্রশ্ন উঠছেই। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশ হচ্ছে। তবে বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি জামায়াত।

তবে জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, অন্য কোনো নামে নিবন্ধন করে সেই দলে একীভূত হওয়া-এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা কৌশল জামায়াত নেয়নি। ফলে নিবন্ধনের আবেদনকারী দলটির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, কোনো ভিন্ন নামে বা প্রক্সি সংগঠন করে নিবন্ধন নিয়ে সেই দলের মাধ্যমে নির্বাচন করবে- এরকম কোনো পলিসি জামায়াতের নেই। এরকম কোনো সিদ্ধান্তও নেই।

কিন্তু ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতাদের অনেকেই জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা উঠেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ তাহের বলেন, এখন তো বিভিন্ন দলে নানা গ্রুপের লোকজন আছে। জামায়াত ও ছাত্রসংগঠন থেকে চলে গেছেন। এমন অনেকেই বিভিন্ন দলে আছেন। কিন্তু তারা দলের সিদ্ধান্তে বা দলকে ইনফর্ম করে যায়নি। তাদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো যোগাযোগও নেই।

এ নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামী যদি এরকম কোনো প্রক্সি সংগঠন করে তাহলে দলের আরও পরিচিত এবং মধ্যমসারির লোক দিয়ে অন্তত করা হতো। সেরকম কিছু হয়নি।

দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর মনে করেন, নিবন্ধন বাতিল হওয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা চাপে পড়েছে জামায়াত। কিন্তু ভূঁইফোড় কোনো দলের নামে নিবন্ধন নেয়ার মতো পরিস্থিতিতে এখনও পড়েনি দলটি।

তবে নতুন দল ও জামায়াতকে ঘিরে আলোচনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কোনো মন্তব্য করেননি।

কিন্তু তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের ব্যাপারে এখন সংশ্লিষ্ট আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে।

ফলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি নিবন্ধন পাবে কিনা-সেদিকেই সবার নজর থাকছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত ছোট ছোট ৩০টিরও বেশি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর