রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ অক্টোবর, ২০২২ ৬:১২ : অপরাহ্ণ
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই নাটকীয়তা আর রুদ্ধশ্বাস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সেই চিরচেনা রূপই দেখা গেলো।
খেলা শেষ হতে তখন মাত্র ৮ বল বাকি। জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ২৮ রান। হারিস রউফের শেষ দুই বলে ছক্কা মেরে ব্যবধান ১৬ রানে নিয়ে আসেন ভিরাট কোহলি। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট সেটাই হতে পারতো।
কিন্তু শেষ ওভারে যে নাটকীয়তা হলো। তাতে এক দলের সমর্থকদের শ্বাস বন্ধ হয় তো আরেক দলের সচল হয়। তবে শেষ পর্যন্ত হাসি ধরে রাখতে পেরেছেন ভারতের সমর্থকরা।
আজ রোববার মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ১৫৯ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ভারত ৪ উইকেট হাতে রেখে ইনিংসের শেষ বলে জয় তুলে নেয়।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান।
শুরুতেই পাকিস্তানকে ধাক্কা দেন তরুণ পেসার আর্শদ্বীপ সিং। তিনি অধিনায়ক বাবর আজমকে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান।
অধিনায়ককে হারানোর ধাক্কা না কাটতেই টি-টোয়েন্টির সেরা ব্যাটার রিজওয়ানকে হারায় পাকিস্তান।
চতুর্থ ওভারে আর্শদিপের বলে ফাইন লেগে ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিজওয়ান। ১২ বলে মাত্র ৪ রান করেন তিনি।
মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান।
সেখান থেকে উদ্ধার করতে জুটি বাধেন ইফতেখার আহমেদ ও শান মাসুদ। এই জুটিতে পথ দেখে পাকিস্তান।
দুজন মিলে উপহার দেন ৭৬ রানের চমৎকার জুটি। এক ওভারে অক্ষর প্যাটেলকে পরপর ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন ইফতেখার।
কিন্তু এরপরই বিদায় নেন ইফতেখার। হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়েই বিদায় নেন তিনি। তার বিদায়ের পর ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় পাকিস্তান।
এরপর একে একে বিদায় নেন শাদাব খান ও হায়দার আলি। তবে শেষ পর্যন্ত খেলার আমেজ বাঁচিয়ে রাখেন শান মাসুদ।
শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে পাকিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মাসুদ। ব্যাট হাতে ৪২ বলে ৫২রান করেন তিনি। আফ্রিদি করেন ১৬ রান।
ভারতের হয়ে বল হাতে ৩০ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া। সমান তিনটি নেন আর্শদিপ সিং। শামি ও ভুবনেশ্বর নেন একটি করে উইকেট।
১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারেই নাসিমের বলে বিদায় নেন লোকেশ রাহুল।
এরপর ফেরেন আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা। টিকতে পারেননি যাদবও। জ্বলে ওঠার আগেই তাঁকে থামান হারিস রউফ। ১০ বলে ১৫ রান করেন যাদব। এরপর সাজঘরে ফেরেন অক্ষর প্যাটেল।
৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে উদ্ধার করতে হাল ধরেন কোহলি ও পান্ডিয়া।
এই জুটিতেই পথ দেখে ভারত। জমে ওঠে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসেন বিরাট কোহলি।
শেষ ২ ওভারে ভারতের সামনের লক্ষ্য ছিল ৩১ রান। ১৯তম ওভারে হারিসের প্রথম ৪ বল থেকে আসে মাত্র ৩ রান। পরের দুই বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে লক্ষ্যটাকে হাতের নাগালে আনেন কোহলি।
শেষ ওভারে তাই ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ রানে। শেষ ওভারে স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে বোলিংয়ে আনেন পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম।
প্রথম বলেই হার্দিককে ক্যাচ আউট করে বিদায় করেন নওয়াজ। ৩৭ বলে ৪০ রানের দারুণ ইনিংস খেলে বাবরের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন হার্দিক।
ক্রিজে আসা দীনেশ কার্তিক সিঙ্গেল নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দেন। তৃতীয় বলে আসে ২ রান। চতুর্থ বলে ডিপ মিড-উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন কোহলি। সঙ্গে উপহার হিসেবে পান নো বল।
এরপর ওয়াইড ও বাই মিলিয়ে আসে আরও ৪ রান। শেষ ২ বলে ২ রানের সহজ লক্ষ্য পার হতে গিয়েও পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে ফেরেন কার্তিক।
কিন্তু ওয়াইড দিয়ে চাপটা ভারতের ওপর থেকে সরিয়ে নেন বোলার নিজেই। শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
৫৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৯/৮ (বাবর ০, রিজওয়ান ৪, ইফতেখার ৫১, শাদাব ৫, মাসুদ ৫২*, আসিফ ২, নেওয়াজ ৯, হায়দার ২, আফ্রিদি ১৬ ; পান্ডিয়া ৪-০-৩০-৩, অশ্বিন ৩-০-২৩-০, প্যাটেল ১-০-২১-০, শামি ৪-০-২৫-১, ভুবনেশ্বর ৪-০-২২-১, আর্শদিপ ৪-০-৩২-৩)।
ভারত: ২০ ওভারে ১৬০/৬ (রাহুল ৪, রোহিত ৪, কোহলি ৮২*, যাদব ১৫, অক্ষর ২, পান্ডিয়া ৪০, কার্তিক ১, অশ্বিন ১ ; আফ্রিদি ৪-০-৩৪-০, নাসিম ৪-০-২৩-১, রউফ ৪-০-৩৬-২, শাদাব ৪-০-২১-০, নেওয়াজ ৪-০-৪২-২)।
ফল: ৪ উইকেটে জয়ী ভারত।