রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:০৬ : পূর্বাহ্ণ
খুলনায় বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করলেও এখন সুর পাল্টে মরিয়ম মান্নান বললেন, তার মা আত্মগোপনেই ছিলেন।
আদালত ও পুলিশের কাছে তার মাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহারের আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন মরিয়ম মান্নান।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন মরিয়মের মা ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম।
পরে তার আরেক মেয়ে আদুরী বেগম অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও করেন। পুলিশ ওই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করে।
মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন মরিয়ম মান্নান। বিষয়টি আলোচিত হয় দেশজুড়ে। দীর্ঘদিনেও মরিয়মের মায়ের হদিস দিতে না পারায় পুলিশের সমালোচনাও করেন অনেকে।
এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় উদ্ধার হওয়া একটি লাশ নিজের মায়ের বলেও দাবি করেছিলেন মরিয়ম। তবে ২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধার করা হয় মরিয়মের মা রহিমা বেগমকে।
তবে উদ্ধারের পর ১৫ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি রহিমা বেগম। পরদিন সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার পর পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম দাবি করেন, অপহরণ করা হয়েছিল।
তবে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি বলতে পারেননি। তার দাবি ছিল পানি আনতে গেলে তিন-চারজন তার মুখে কাপড় ধরে কিছু একটা দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মরিয়ম জানান, ফরিদপুরে তার মায়ের অবস্থানের খবর আগেই জেনেছিলেন। তবে নানা জনের নানা পরামর্শে সেটি বিশ্বাস করেননি তিনি। এজন্যই তিনি ময়মনসিংহের অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহকে মায়ের দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
মরিয়ম আরও বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহকে মা ভাবার কারণে তিনিসহ অন্য ভাইবোনেরা ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ ছিলেন না। এ কারণেই তারা রহিমা বেগমের বান্দরবান ও ফরিদপুরে অবস্থানের তথ্যকে ‘গুরুত্ব’ দেননি।
মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে বরাবরই প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমির বিরোধের বিষয়টিকে দায়ী করে আসছিলেন মরিয়ম। রহিমা নিখোঁজের পরদিন দৌলতপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন তার আরেক মেয়ে আদুরী।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন, আমরা মামলায় কারও নাম দিইনি। সন্দেহভাজনদের নাম দিয়েছিলাম। তাদের সন্দেহের যথেষ্ট কারণ ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। আমি ইতিমধ্যে আইনজীবীকে বলে দিয়েছি, মামলাটি তুলে নিতে। তখন তাদের প্রতি সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এখন তো মনে হচ্ছে মা আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মামলাটি তুলে নেব। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমাও চাইব।
মরিয়মের বোন আদুরীর করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন রহিমা বেগমের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ এবং রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার।
সৎ বাবাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন, মা নিখোঁজ হওয়ার পরে বেল্লাল ঘটক প্রথমে আমাদের বলেছিলেন, তোমার মা আর নেই। তোমার মাকে মেরে ফেলছে। পরে তিনি আবার বলছিলেন আমি কিছু জানি না তোমাদের মা কোথায় গেছে। তার দুই ধরনের কথায় সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছিলাম। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
মরিয়ম বলেন, আমার বোন মামলা করেছে। তখন প্রশাসন বলেছিল কাউকে সন্দেহ হয় কি না। যেহেতু এর আগে আমাদের বাড়িতে তারা হামলা করেছিল, তাই তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছিল। এখন সেটা গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে। আমাদের ভাইবোন বিশেষ করে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বিবাদীরা আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে নানা রকম কেচ্ছা রটাছে। আমার নামে ফেইসবুকে ১০০ আইডি খুলে নোংরামো ছড়ানো হচ্ছে। আমার মা তিনটি বিয়ে আমার চারটি এসব রটানো হচ্ছে।
তিনি জানান, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পর, বান্দরবান থেকে মণি বেগম নামে এক নারী ভাই মিরাজকে কল করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনার মা ভিক্ষা করতে করতে আমাদের কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। নম্বরটি আমার ভাই র্যাবকে দিয়েছিল তদন্ত করতে। এ ছাড়া ফরিদপুর থেকেও আমার ভাইয়ের মোবাইলে জানানো হয়েছিল, মা তাদের কাছে আছে। তবে মোবাইলটি আমার ভাইয়ের স্ত্রী রিসিভ করে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। সে সময়ে আমাদের মাথা ঠিক ছিল না। একেকজন ফোন করে একেক রকমের কথা বলছিলেন। তাই কোনটা সত্য বুঝতে পারছিলাম না।
তবে মরিয়মের ভাই মিরাজ এর আগে জানিয়েছিলেন, ফরিদপুর থেকে যখন কল এসেছিল, তখন তার দুটি ফোনই মরিয়মের কাছে ছিল।
মরিয়ম মান্নান বলেন, মায়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে মা জীবনের প্রতি বিরক্ত, নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি চলে গিয়েছিলেন সারা জীবনের জন্য। এটার দায় আমাদেরও। আমরা তো তার সন্তান। মা ভীষণ কান্নাকাটি করছেন। তিনি বলছেন আমি তো চলেই গেছি, আমাকে কেন নিয়ে আসছ। তিনি আদালতে যা বলেছেন তা গ্র্যান্ট করার কিছু নেই। মায়ের এই স্টেটমেন্টটা আমরা নিচ্ছি না। আইন-আদালত কেউ নেবে না।
তার যদি মাথা ঠিক থাকত, তাহলে ছেলে-মেয়েদের রেখে এসব করত না। তিনি একা একা চলে যেতেন না। তার জন্য আমরা হেনস্তার শিকার হয়েছি। আমরাই নিচ্ছি। মায়ের জবানবন্দি আদালতে অবশ্যই পরিবর্তন করাব। মাকে তো আমরা এখনই আদালতে নিতে পারছি না। পিবিআই তদন্ত করছে, তারা যখন ডাকবে, তখন আদালতে স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করাব।
মরিয়ম বলেন, মা এখন আমাদের কাছে থাকতে চাচ্ছেন না। যদিও আদালত আমার বোন আদুরীর জিম্মায় মাকে মুক্তি দিয়েছেন। আমি মাকে নিয়ে ঢাকায় আছি। পরবর্তীকালে পিবিআই যখন মাকে আদালতে নেবে, তখন বিষয়টা দেখা যাবে। তবে মা চাইলে তো তাকে একা ছেড়ে দেওয়া যায় না। তিনি তো মা।
অপহরণ মামলার তদন্তের বিষয়ে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, তদন্তে নেমে প্রায় সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। যে সময় রহিমা আত্মগোপনে যান, সে সময়ে তার স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কাছেই ছিলেন। যে কারণে বেল্লাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। তাকে আমরা রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছি। ৪ অক্টোবর তার শুনানি হবে। তারপর রহিমার আত্মগোপনে কারা জড়িত জানা যাবে। সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।