রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:১০ : পূর্বাহ্ণ
তুচ্ছ ঘটনায় প্রথমে তিন যুবককে তুলে আনা হয় থানায়। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে না পেয়ে চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। পরে ডাকাতির প্রস্তুতির সাজানো মামলায় পাঠানো হয় কারাগারে।
এখানেই শেষ নয়। তুলে আনা হয় এক জায়গা থেকে কিন্তু মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় অন্য জায়গায়। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের ভুজপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
থানা হেফাজতে পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন চট্টগ্রামে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের গজারিয়া মাদারতলি এলাকার যুবক সুমন হেসেন।
ইলেকট্রিক শক, লাঠি দিয়ে আঘাতসহ শারীরিক নানা নির্যাতনের দুঃসহ সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আতকে উঠেন দুই পশু চিকিৎসক শাহীন এবং নুরুল আলমও।
গত ২৯ জুলাই রাতের ঘটনা। দুই পক্ষের ভুল বুঝাবুঝির ঘটনায় ফটিকছড়ির ভুজপুরের হেঁয়াকো বাজারে হাজির থানা পুলিশ। সেখান থেকে আটক করা হয় মো. সুমন হোসেন, মো. শাহীন আলম এবং নুরুল আলমকে। যা ধরা পড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়।
এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আমিনুল ইসলাম ভূঁঞা। যার সত্যতা মেলে প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখেও।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা যখন আসি তখন পুলিশ ছিল। আমরা অন্যদিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ওদের তিনজনকে গাড়িতে তুলে ফেলে। এরপর তাদের নিয়ে যায়। ওদের যখন নিয়ে যায় তখন ওদের হাতে কিছু ছিল না।
তবে হেঁয়াকো বাজার থেকে আটক করা হলেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা থানায় রাখার পর ৩০ জুলাই রাতে তাদের বিরুদ্ধে করা হয় একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা। ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়, হেঁয়াকো বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সেলফি রোড এলাকা।
স্থানীয় একজন বলেন, আমার জানামতে, এমন কোনো ঘটনা সেদিন সেখানে ঘটেনি।
তাহলে কেন তাদের ফাঁসানো হলো?
ভুক্তভোগীদের দাবি, আটকের পর তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে না পেয়ে এমন কাজ করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী মো. সুমন হোসেন বলেন, আমি সেখানে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সেন্সলেস ছিলাম। আমি কিছুই জানি না। সকালে ওরা আমাদের সবকিছু বলতেছে। ওসি স্যারের পায়ে ধরছি আমাকে ছাড়ে নাই। এমনও ভয় দেখাইছে যদি টাকা না দিই তাহলে ক্রসফায়ার করে আমাদের মেরে ফেলবে।
ভুক্তভোগী মো. শাহীন আলম বলেন, আমাদের সামনে অস্ত্রগুলো স্টোররুম থেকে বের করে লকাপের সামনে দিয়ে নিয়ে ওখানে ছবি ওঠানোর জন্য। আমরা ছবি উঠাতে অস্বীকার করলে আমাদেরকে ওখানে টর্চার করে।
ভুক্তভোগী মো. নুরুল আলম বলেন, সেদিনের সেই স্মৃতিগুলো যদি আমাদের মনে পড়ে কিসের খাওয়া-দাওয়া, কিসের চলাফেরা। সঠিক তদন্ত করে আমাদের এ মিথ্যা অপবাদ মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এই মামলা যে সাঁজানো তার প্রমাণ মেলে এজাহারেও। যেখানে উল্লেখ আছে, আটক অভিযানে অংশ নেন ভূজপুর থানার এএসআই ইব্রাহিমসহ কয়েকজন। অথচ সেই ইব্রাহিম ফোনে দাবি করেন সেদিন এমন কোন অভিযানেই যাননি তিনি।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমি ছিলাম না। এ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।
ঘটনা জানতে গত সোমবার চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের টিম যায় ভূজপুর থানায়। সেখানে গিয়ে ওসিকে পাওয়া না গেলেও ফোনে তিনি তিনজনকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার ওসি মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন ফারুকী হেঁয়াকো বাজার থেকে তিন যুবককে আটকের কথা স্বীকার করলেও আটকের সময় নিয়ে তিনি এলোমেলো তথ্য দেন।
তিনি বলেন, না না, এটা সম্ভবত সত্য নয়।
দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে পাওয়া যায়নি মামলার বাদী এসআই আমিনুলকে। পাওয়া যায় টেলিফোনে।
ভুজপুরের ওসি হেঁয়াকো বাজার থেকে আটকের কথা বললেও, এসআই আমিন বলছেন ভিন্ন কথা। অস্বীকার করেন থানায় মারধরের বিষয়টি।
দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আমিনুল ইসলাম ভূঞা বলেন, তাদেরকে আমরা হেঁয়াকো বাজার থেকে গ্রেপ্তার করিনি। তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি সেলফি রোড থেকে। এই ধরণের কোনো নির্যাতন হয়নি।
গেল বৃহস্পতিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় ভুক্তভোগী তিনজনকে অস্থায়ী জামিন দেন আদালত। তার দাবি, একটি পক্ষ পুলিশকে দিয়ে ফাঁসিয়েছে তিনজনকে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর ১নং বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন সাজু বলেন, কোনো ব্যক্তি বা কারো কাছে যারা এ কাজ করেছে তারা নিশ্চয়ই বেচা গেছে সেটাই মনে করি।
তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সেগুলোর সত্যতা যদি পাওয়া যায় তাহলে এর সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।