সরকার মানুষের পেটে তিনবার লাথি মেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘একবার হচ্ছে রিজার্ভ সংকটের ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করে, দ্বিতীয়বার, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বেশি মূল্যে আমদানি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে এবং তেলের দাম বাড়ার কারণে এক একটি দ্রব্যমূল্যের দাম তিন-চার বার করে বেড়েছে। এভাবে তিনবার মানুষের পেটে লাথি মারা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সনাতন পার্টির (বিএসপি) আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘দেশ আল্লাহর ওয়াস্তে চলছে। কোনো সরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না। সব খাতে দুর্নীতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি এ দুটি সেক্টর হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। সব সেক্টরেই দুর্নীতি আছে, তবে এই দুই সেক্টর গোপন দেখে সাধারণ মানুষ জানে না যে, এত বড় দুর্নীতির আখড়া।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি যেহেতু অয়েল সেক্টরে চাকরি করেছিলাম, দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা আছে আমার। অনেক পরিচিত লোক থাকায় আমি দুর্নীতির অনেক খবর পাই।’
জি এম কাদের বলেন, ‘এলএনজি দুটি কারণে তারা (সরকার) করেছে। এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্যাপাসিটি ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রতিদিন। তবে এখন তারা চালাচ্ছে ১০০-২০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রতিদিন। কারণ এখন তাদের গ্যাস নেই।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে তারা প্রতিটি ইউনিটকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার প্রতিদিন দিচ্ছে। তারপর তারা আরও দুটি ফ্লোটিং এলএনজি ইউনিট আনার চেষ্টা চালাচ্ছে, যেগুলো অপরিকল্পিত। প্রতিদিন এরকম লাখ লাখ ডলার আমরা দিচ্ছি দুয়েটি ফার্মকে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে টাকার অভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল বছরে বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি খাতে গচ্ছা দিচ্ছে। জ্বালানি খাতে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হচ্ছে। যে দাম বাড়ানো জয়েছে জ্বালানি তেলের, সেখানে ট্যাক্স একটু কম নিলেই হতো। এরশাদ সাহেব জ্বালানিতে কোন ট্যাক্স নিতেন না। একই সঙ্গে জ্বালানিতে তারা যে মুনাফা করেছে; তখন যদি সেটাকে কাজে লাগানো যেত তাহলে এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো লাগতো না।’
সেচের জন্য পানি না দিতে পারলে খাদ্য সংকট হবে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘টাকার জন্য সরকার বলছে এক থেকে দুই ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ দেবে না। তবে আমাদের নির্বাচনী এলাকা ও গ্রামগঞ্জ থেকে জানতে পারছি সেখানে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। সামনের দিনে সেচের জন্য কী হবে আমার তা জানা নেই। বিদ্যুতের অভাবে সেচের জন্য পানি না দিতে পারলে খাদ্য উৎপাদন কম হবে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সেচের অভাবে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য কম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
দেশে ত্রিভুজ নীতি চলছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে দাবি করছিলাম রেশন কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য দেন। তবে এখন শুনছি দুর্নীতির কারণে দলীয় লোক; যাদের টাকা-পয়সা আছে তাদের লিস্ট করে টিসিবির কার্ড দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাদের টিসিবির কার্ড পাওয়া দরকার, তারা পাচ্ছে না। দেশের জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।’