নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২১ আগস্ট, ২০২২ ৭:৪৪ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজি মামলার অবশেষে বিচার শুরু হয়েছে।
আজ রোববার চট্টগ্রাম পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন-চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম রতন, আবু নাছের চৌধুরী আজাদ, একেএম নাজমুল আহসান, মো. ইদ্রিস মিয়া ও মো. ইমরান হোসেন জিয়া।
২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন পাঁচলাইশ থানার ওসি তদন্ত মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর চাঞ্চল্যকর এ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন। আদালতে চার্জশিট জমাদানের চার বছর পর এ মামলার চার্জ গঠন হলো।
এ নিয়ে গত ১৫ জুন রাজনীতি সংবাদে ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ৪ বছরেও শুরু হয়নি মামলার বিচার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় দেবাশীষ নাথ দেবুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছিলেন বন্ধন নাথ নামে এক কুয়েত প্রবাসী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরায়। দেবাশীষ নাথ দেবু হলেন বন্ধন নাথের ভাগিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে নগরীর ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের পাশে পুরনো একটি ভবনসহ ১২ কাঠা জায়গা কিনেছিলেন বন্ধন নাথ। এরপর তিনি ওই ভবনটি ভাড়া দেন। আত্মীয়তার সুবাদে দেবাশীষ নাথ দেবুকে ওই ভবনে আশ্রয় দেন বন্ধন নাথ। কিন্তু সেখানে আশ্রয় পেয়ে রাতারাতি রূপ পাল্টে ভবনটির মালিক বনে যান দেবু! ভবনটির নাম দেন ‘দেব ভবন’। ভবনের ৩০টি কক্ষের ভাড়ার টাকা তিনি নিজের পকেটে ভরতেন।
প্রবাসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টের টাকায় কেনা জায়গাটি নিজের নিকটাত্মীয় ‘দখল করে ফেললে’ মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে বন্ধন নাথের।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বন্ধন নাথ সেই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘ডিজাইন সোর্স টিম লিমিটেড’ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিপত্র করেন। পরদিন তিনি ডেভেলপার কোম্পানিকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে গেলে তাতে বাধ সাধেন দেবুসহ মামলার অন্য আসামিরা। তারা বন্ধন নাথকে ভবনটির ভেতর আটকে রাখেন। এরপর তার কাছে তারা ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দেবুসহ মামলার অন্য আসামিরা তাকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে বন্ধন নাথের পিঠের ডান পাশে গুলি করা হয়।
এরপর তারা ব্যবসায়িক লেনদেন বাবদ বন্ধন নাথের কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা পাওনা আছে বলে জোরপূর্বক তিনটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।
এ ঘটনার তিনদিন পর বন্ধন নাথ প্রাণনাশের হুমকির ভয়ে আসামিদের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা প্রদান করেন। আতঙ্কিত হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি দেশ ছেড়ে কুয়েত চলে যান।
কিন্তু ৭০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েও ক্ষান্ত হননি আসামিরা। দুই বছর পর ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ডিজাইন সোর্স টিম লিমিটেড ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি যখন ওই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন, তখন দেবুর নেতৃত্বে অন্য আসামিরা আবার সেখানে গিয়ে হানা দেন। নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে তারা আরও ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর সাগরিকা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দেবাশীষ নাথ দেবু ও এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম। কিন্তু গ্রেপ্তারের মাত্র ১৬ দিনের মাথায় দেবু জামিনে বেরিয়ে আসেন।
গ্রেপ্তারের পর ওই বছরের ১৮ মার্চ জেলগেটে দেবাশীষ নাথ দেবু ও মঞ্জুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন আকবর।
জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ৫ মে আসামি দেবাশীষ নাথ দেবু ডিজাইন সোর্স টিম লিমিটেডের কাছ থেকে একটি চেকে ১৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। সেই চেকটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী প্রাইম ব্যাংক শাখায় তার ব্যক্তিগত একাউন্টে (হিসাব নম্বর: ১৩৬২১০৮০০০১৫১৮) জমা হয়।
এ মামলার দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় বলা আছে, ‘যে ব্যক্তি বলপূর্বক কোনো ব্যক্তিকে জখম করে বা জখম করার ভয় দেখিয়ে মূল্যবান সম্পদ আদায় করে, সেই ব্যক্তি জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ১৪ বছর থেকে সর্বনিম্ন ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করছে কেন্দ্র, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ হারাতে পারেন দেবু!