শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

বিপিসির লাভের ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায়, প্রশ্ন সিপিডির


আজ রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১০ আগস্ট, ২০২২ ৩:৫৪ : অপরাহ্ণ

গত ৬ বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? বলা হয়েছে, ওই টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সেই হিসাব খুঁজে পাই না। কোথায় তারা বিনিয়োগ করে এ অর্থ?-এ প্রশ্ন রেখেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সূত্রে যে খতিয়ান দেখতে পাই, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ১২৬ কোটি, ২০১৬ সালে ৯ হাজার ৪০ কেটি, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। এছাড়া ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭৬৮, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৬৭ এবং ২০২১ সালে বিপিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা লাভ করেছে। বিপিসি সব সময় জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভ করেছে। তাহলে এখন কেন ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলো?

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন ব্যাংকে বিপিসির ২৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা জমা রয়েছে। তাহলে ওই টাকা কোন টাকা? এছাড়াও বাকি টাকা কোথায়? আমার ধারণা বাকি টাকাও বিপিসির হিসাবেই রয়েছে। তাহলে কেন লোকসান দেখিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলো?

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চলতি অর্থবছরেও ৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিপিসি। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, এ বছরেও বিপিসি বিনিয়োগ করবে! জনগণের মাথায় বোঝা চাপিয়ে বিপিসি কোথায় বিনিয়োগ করবে?

তিনি বলেন, অবশ্যই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এড়ানো যেত। সংকট এড়ানো যেত, মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ত না। বিপিসি যদি তার হিসাবে স্বচ্ছতা রাখতো, তাহলে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব সমন্বয় করা যেত। বিপিসি কীভাবে তার অর্থের হিসাব রাখছে, আমাদের জানা দরকার। তারা কোনটা লাভ, কোনটা লোকসান বলছে, সে হিসাব জনগণের সামনে আসা দরকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানের বেশি। নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে, দাম কাদের চেয়ে বেশি, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে বেশি আছে। যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যখন তুলনা করবো তখন সে দেশের অর্থ সামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা জরুরি।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি পায়, ডিজেলে দাম বৃদ্ধিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে, ফলে আমদানি আবার বেড়ে যাবে। শিল্পের উৎপাদনেও খরচ বেড়ে যাবে। তাহলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে। যার প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। এর বড় ধাক্কা আসবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর