শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

সেই শিশুটির নাম রাখা হলো ‘ফাতেমা’, শর্তে দেওয়া হবে দত্তক


সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে ভূমিষ্ঠ হওয়া ফুটফুটে শিশুটি

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৮ জুলাই, ২০২২ ১১:০১ : অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘ফাতেমা’। শর্তের ভিত্তিতে শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে তার পরিবার।

ময়মনসিংহের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নবজাতকটি পেয়েছেন দুধমা। তাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক প্রসূতি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিশুটির ডান হাত ভেঙে যাওয়ায় আরো ১০-১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকতে হতে পারে। তবে এখন সে শঙ্কামুক্ত।

জন্মেই অনাথ সেই শিশুর আপন বলতে বেঁচে আছে আট বছর বয়সী বোন জান্নাতুল ফেরদৌস ও পাঁচ বছরের ভাই ইবাদত।

আজ সোমবার দুপুরে জান্নাতুল জানায়, বোন হবে জেনেই নাম ‘ফাতেমা’ ঠিক করে রেখেছিল সে।

দত্তক নিতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারের

নবজাতককে দত্তক নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গত রোববার রাত পর্যন্ত দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে সোমবার শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু আত্মীয়দের নিয়ে আলোচনায় বসেন। পরে জানান, নবজাতককে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন।

শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার দুই ছেলেই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। গত শনিবার নিহত হওয়া জাহাঙ্গীর তার দেখাশোনা করলেও তিন সন্তান রেখে তিনিও নিহত হলেন। এখন তারা অথৈ সাগরে পড়েছেন। শিশুটিকে তাদের পক্ষে লালন-পালন সম্ভব নয়। এ কারণে তারা দুজনসহ জাহাঙ্গীরের রেখে যাওয়া আরও দুই সন্তানের ভরণপোষণের খরচ যিনি মেটাতে পারবেন, এমন লোকের হাতেই তারা শিশুটিকে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বোন জান্নাতুল জানায়, সে তার বোনকে ভালো মানুষের কাছে দিতে চায়। মা-বাবার জন্য কিছুক্ষণ পরপর জান্নাতুল কাঁদলেও শিশু ইবাদতের তা বোঝার সাধ্য নেই। সোমবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবার কবরের আশপাশ ঘুরে মোবাইলে কার্টুন দেখছে ইবাদত। তাকে এভাবেই ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে।

হাইকোর্টে রিট

‘ফাতেমা’র জীবনযাপনের খরচ সারাজীবন রাষ্ট্র বহন করবে-এমন নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এ রিট করেন। রিটে শিশুটি এবং দুর্ঘটনায় নিহত তার বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়েছে। রিটে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

ফাতেমা ও তার দুই ভাইবোনের সহায়তার জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। সোমবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ হিসাব খোলা হয়। হিসাবের শিরোনাম- রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক ও অন্য দুই সন্তানের সহায়তার হিসাব। নম্বর- ৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখা। হিসাব পরিচালনা করবেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নবজাতকের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু।

সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান পরিবারের খোঁজ নিতে যান। এ সময় তিনি তাদের হাতে ব্যাংক হিসাবের চেক বইসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা তুলে দেন।

গেলো শনিবার বিকেল ৩টার দিকে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও ছয় বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ত্রিশালের রায়মনি গ্রামের রত্না বেগম। অনাগত সন্তানের শারীরিক অবস্থা কেমন আছে তা জানতে কাছেই একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে যাচ্ছিলেন তারা।

কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন পরিবারের সবাই। ঘটনাস্থলেই সবার মৃত্যু হলেও এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যায় মাতৃগর্ভে থাকা শিশুটি।

দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজন যখন কাছে গেল তারা দেখতে পেল তিনটি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। তারা জন্ম নেওয়া বাচ্চার কান্নাও শুনতে পাচ্ছিল। কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে কোথা থেকে কান্নাটা আসছে সেটা বুঝতে পারেনি। পরে তারা দেখে যে মহিলার বোরকার নিচে একটা বাচ্চা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ট্রাকের চাকার চাপে পেট ফেটে নাড়িভুঁড়িসহ বাচ্চাটা বের হয়।

ঘটনার মর্মান্তিকতা সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হচ্ছে আলোচনা।

নবজাতকটির দায়িত্ব নিতে চান অনেক বিত্তবান মানুষ। অনেকেই আসছেন দত্তক নিতেও।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর