নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৫ জুন, ২০২২ ১১:৩১ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া বেসরকারি এ ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজেরাই একটি তদন্ত কমিটি করেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের কমিটিতে আছেন টার্মিনাল ম্যানেজার, ডেপুটি ডাইরেক্টর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনার। তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাজাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বন্দর থেকে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। অনিয়ম ছিল কিনা, তা তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে বলবে, নিরাপত্তায় বা অগ্নি নির্বাপণে কোনো ঘাটতি ছিল কি না।
বিএম কনটেইনার কর্তৃপক্ষও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএম কনটেইনারের মালিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের জিএম (প্রশাসন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকীর পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ দুর্ঘটনায় আমরা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করছি এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সরকারি তদন্ত কমিটিকেও সহযোগিতা করা হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে, গুরুতর আহত বা অঙ্গহানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ছয় লাখ এবং কম আহতদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে কারও পরিবারে শিশু থাকলে সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হবে বিএম কন্টেইনারের পক্ষ থেকে। আহতদের চিকিৎসা খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কোম্পানিটি।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এর প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিকে সময় দেয়া হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস।
সদস্যরা হলেন- পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার আবু নুর রাশেদ আহমেদ, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের মেজর আবু হেনা মো. কাউসার জাহান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম ও চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। কমিটিতে সদস্য সচিব রাখা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে। এই কমিটিকে সময় দেয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস।
এ কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম।
তিনি জানান, কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত কমিশনার শফিউদ্দিনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম কমিশনার তারেক হাসান, সালাহউদ্দিন রিজভী, সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা ও রাজস্ব কর্মকর্তা বিকাশ দাশ। এই কমিটিকেও সাত কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ,পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিমকে প্রধান এবং চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মো. আনিছুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তাদের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
এ তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিন সময় দেয়া হয়েছে।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন বেসরকারি এই কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাসায়নিক থাকায় একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্থানীয় শ্রমিকসহ অনেকে হতাহত হন। পুড়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও। এখনো আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ভয়াবহ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।