শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

এতো কাছে, তবুও তারা কতো দূরে!


প্রদীপ কুমার দাশ ও স্ত্রী চুমকি কারণ। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ মে, ২০২২ ৭:৪৮ : অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে সিনহা হত্যা মামলায় স্বামী বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেপ্তারের পরপরই আত্মগোপন। এরপর ২১ মাস ধরে লাপাত্তা ছিলেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলায় শেষমেশ আত্মসমর্পন। স্বামী প্রদীপের মতো তাকেও যেতে হলো কারাগারে।

গেলো সোমবার আত্মসমর্পনের পর চুমকিকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তার ঠাঁই হয়েছে সাধারণ হাজতি সেলে। আর মেজর সিনহা হত্যায় মৃত্যুদণ্ড নিয়ে একই কারাগারের কনডেম সেলে আছেন প্রদীপ।

একই কারাগারে থাকলেও এই দম্পতি যেন-‘এতো কাছে থেকেও তবু তারা কতো দূরে’।

কারা সূত্রে জানা গেছে, প্রদীপ-চুমকি দম্পতিকে নিয়ে সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে হাসিঠাট্টাও চলছে। কৃতকর্ম তাদের একই কারাগারে নিয়ে এলেও এই দম্পতির দেখা-সাক্ষাৎ অথবা কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা স্বামী-স্ত্রী (প্রদীপ-চুমকি) হলেও কারাগারে তাদের দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। কারণ প্রদীপ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, তাই তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে অন্য কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই।

কারা সূত্র জানিয়েছে, চুমকি কারাগারে আসার পর তাকে সাধারণ নারী হাজতিদের সঙ্গে একটি সেলে রাখা হয়েছে। যখন যেমন হাজতি হয়, তখন সেখানে ততোজন থাকেন। কারাবিধি অনুযায়ী তিনি সাধারণ খাবারই পাচ্ছেন।

সূত্রটি বলছে, স্বামীর কাছাকাছি থাকলেও চুমকি তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এজন্য তার মন খারাপ থাকে। সেলে থাকা অন্য বন্দীদের সঙ্গে তেমন কথাবার্তাও বলেন না। অনেকটাই শান্ত এবং একধ্যানে চুপচাপ থাকেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন, তার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এক পর্যায়ে ধরা পড়েন প্রদীপ। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন শামলাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (পরে বরখাস্ত) লিয়াকত আলীসহ আরও মোট ১৪ জন।

মামলার তদন্তে উঠে আসে প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। বাকি আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে যাবজ্জীবন আর সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে প্রদীপ-লিয়াকত ছাড়া তিনজন পুলিশ সদস্য আর তিন জন পুলিশের সোর্স।

এদিকে সিনহা হত্যা মামলার পরপরই একের পর এক প্রদীপের নানা অপকর্ম দুর্নীতি বের হয়ে আসে। অবৈধ উপায়ে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য গড়েছিলেন বিপুল সম্পদ। প্রদীপ ধরা পড়ার পর স্ত্রী চুমকি ও সন্তান নিজেদের বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যায়।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধেও। এরপর থেকে পালিয়ে ছিলেন চুমকি কারণ। দুর্নীতির অভিযোগে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে চুমকি ২১ মাস ধরে আদালতে হাজির হননি।

একাধিকবার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছিলো, স্বামী প্রদীপ গ্রেপ্তারের পর চুমকি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

শেষমেশ ২১ মাস পর গেল সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন প্রদীপ-পত্নী চুমকি। আবেদন করেন জামিনের। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর