শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

মুহিতকে নিয়ে বিএনপি নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস, সমালোচনার ঝড়


ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ এপ্রিল, ২০২২ ৭:৪৮ : অপরাহ্ণ

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে তার জন্মভূমি সিলেটসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ এই কৃতিসন্তানের মৃত্যুতে শোকাহত।

সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনের সাবেক এমপি মুহিতের মৃত্যুতে সিলেট একজন ভালো মানুষ ও অভিভাবককে হারালো বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের স্ট্যাটাস নিয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খন্দকার মুক্তাদির তার ফেসবুক আইডি থেকে মুহিতের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তাদির প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুহিতের মৃত্যুর পর খন্দকার মুক্তাদির ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। জনাব মুহিত ছিলেন কলেজজীবনে আমার চাচার সহপাঠী। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন ভোটারবিহীন জবরদখলকারী একটি সরকারের অংশ, যে সরকার ইলিয়াস আলীসহ অন্তত চারজন সিলেটি এবং সারাদেশে কয়েকশত গুমের জন্য অভিযুক্ত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালীন তার অনুসৃত ভুল অর্থনৈতিক নীতি এবং একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প ও ক্রয় প্রস্তাব পাসের দায় এই জাতির পরিশোধ করতে হবে বহু বছর ধরে। তার স্মৃতির সাথে এই পীড়াদায়ক বাস্তবতা জড়িয়ে থাকবে বহুদিন। তার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি।’

এই স্ট্যাটাসের জন্য তাকে প্রকাশ্যে গণধোলাই ও সিলেট থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছে সিলেট মহানগর যুবলীগ।

বিএনপি নেতা খন্দকার মুক্তাদিরকে ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত করে তার স্ট্যাটাসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার।

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে খন্দকার মুক্তাদির যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনো তা করতে পারেন না। খন্দকার মুক্তাদির দেশবাসী ও সিলেটবাসীর হৃদয়ে আঘাত করেছেন মন্তব্য করে তারা বিএনপিকে মানসিক বিকারগ্রস্তদের সংগঠন বলে উল্লেখ করেন।

তারা বলেন, খন্দকার মুক্তাদির কুলাঙ্গার খন্দকার মোশতাকের উত্তরসূরি। অবিলম্বে ‘কুলাঙ্গার’ মুক্তাদিরকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে সিলেটবাসী ও দেশবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি জানান মহানগর যুবলীগ নেতারা।

এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ফেসবুকে খন্দকার মুক্তাদিরের বিতর্কিত স্ট্যাটাসের নিচে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে মন্তব্য করেন। তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার মধ্যে ফেসবুকে পূর্বের বিতর্কিত মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন মুক্তাদির।

প্রথম স্ট্যাটাসকে ‘শোকবাণী’ হিসেবে অভিহিত করে দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক সমালোচনা বলে দাবি করেন তিনি। মরহুম মুহিতের কাছে প্রত্যাশা বেশি থাকার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি সরকারের নীতি ও দুর্নীতির সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি মুহিতের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বা তোলার অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা। তাতেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।

দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে খন্দকার মুক্তাদির লিখেন, ‘সদ্য প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্পর্কে আমার শোকবাণীটি হয়ত কারও কারও মন:পুত হয়নি। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই দেখবেন শোকবাণীটির মধ্যে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান হয়েছে, তার রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত নয়। জনাব মুহিত আমার চাচার সহপাঠী ছিলেন, আমরা পারিবারিক পর্যায়ে যখন তার সম্বন্ধে আলোচনা করি বা করতাম তখন মুহিত চাচাই সম্বোধন করি। তার সাথে আমাদের পরিবারের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। সে কারণে তার কাছে প্রত্যাশাও ছিল বেশি। এটিতো কোনো অমূলক কথা নয়, যে সরকারের তিনি অংশ ছিলেন সেই সরকারের সম্পর্কে আমার উল্লেখিত কথাগুলো দেশে এবং বিদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে-রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে, এমনকি সাম্প্রতিক কালেও উচ্চারিত হয়েছে। আর তার অর্থনৈতিক নীতি আমার শুধু না, অনেক দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদের মন:পুত হয়নি। আর যে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো কোনো ব্যক্তির দুর্নীতি না, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অনেকগুলো প্রকল্প সেই সময়ে গৃহীত হয়েছে, যেগুলোর উপযোগিতা এবং প্রকল্পের মূল্যমান নিয়ে গভীর প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু কেউই জনাব মুহিতের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি এবং সেটি তোলার অবকাশ আছে বলেও আমার মনে হয় না। তিনি একজন দার্শনিক স্বভাবের হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। এটিও সত্য, তার অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এত বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী একজন (আরেকজন) মুহিত সাহেব খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাকে মাগফেরাত দান করুন।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর