নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৮ এপ্রিল, ২০২২ ৫:১৪ : অপরাহ্ণ
রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার জন্য ভবন নির্মাণ করা হবে না। মাঠটি যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে আমরা ওই জায়গাটির জন্য এপ্লাই (আবেদন) করেছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ওই এলাকায় খেলার জায়গা নেই। প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু খালি জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই সেজন্য তিনি বলেছেন পুলিশের জমি সেভাবে থাকুক। কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না হয়। যেভাবে চলছে চলতে থাকুক।
তেঁতুলতলা মাঠটি স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের একটি গলিতে। এটি মূলত একটি খালি জায়গা, যা পুলিশ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণ করছে।
মাঠটি রক্ষার দাবিতে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। তারা আধাঘণ্টার মতো মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
তবে এর আগে গতকাল বুধবার রাতে তেঁতুলতলা মাঠে দেওয়াল তৈরির কাজ শেষ করেছে পুলিশ। মাঠটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী, পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আন্দোলনের মধ্যেই পুলিশ দেয়াল তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে।
এলাকাবাসী বলেন, গতকাল প্রতিবাদ-সমাবেশ চলাকালে দেয়াল তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। সবাই চলে যাওয়ার পর আবার কাজ শুরু হয়। রাতের মধ্যেই দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করে পুলিশ।
গত ৩১ জানুয়ারি মাঠটিতে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটি কলাবাগান থানা ভবন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেন আসছেন এলাকাবাসী।তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আন্দোলনরত অবস্থায় গত ২৪ এপ্রিল সকালে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। সারা দিন তীব্র প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও বিশিষ্টজনেরাও প্রতিবাদ ও মানববন্ধন চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে। তারা দাবি করছেন, খেলার মাঠে থানা ভবন করা যাবে না। আর যদি করতে হয়, তাহলে বিকল্প খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
এই খেলার মাঠ রক্ষার আন্দোলনের মুখে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারা তেঁতুলতলা মাঠের জমি ২৭ কোটি টাকায় কিনেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে পুরো জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার ১৩টি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। প্রথমে কলাবাগান থানার জন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন মেলে। সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এরপর জায়গাটির প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার আরবান রেসিডেনসিয়াল জোন (নগর আবাসিক এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত আছে মর্মে নগর উন্নয়নের ছাড়পত্রের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র নিয়েছে ডিএমপি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই জমিতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার সুবিধার্থে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দেন। ঢাকা জেলা প্রশাসক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য সুপারিশসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত পাঠানোর পরেই সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে কলাবাগান থানার জন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক জমির ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ডিএমপি কমিশনার ঢাকা ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১০ টাকার প্রাক্কলন করেন, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় মঞ্জুরি পাওয়ার পর চেকের মাধ্যমে সেই টাকা পরিশোধ করা হয়।