শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

মা-ছেলে হাজতে কেন, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি


আজ বিকেলে তেতুলতলা মাঠে পুলিশের থানা ভবন নির্মাণ ও এলাকাবাসীকে নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ করেছে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ এপ্রিল, ২০২২ ৯:৫১ : অপরাহ্ণ

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সৈয়দা রত্না ও তার কিশোর ছেলে ইসা আব্দুল্লাহকে কেন থানা হাজতে আটকে রাখা হয়েছিল তা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

আজ সোমবার বিকেলে কলাবাগান থানার সামনে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে তারা ওই দাবি তুলেন।

সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান সমবেতদের পক্ষ থেকে এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের খেলার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। থানা ভবন বিকল্প জায়গায় নির্মাণ করতে হবে। আটক করে, গ্রেপ্তার করে এলাকাবাসীকে হয়রানি এবং ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে।’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আগের বছরগুলোর মতো ঈদুল ফিতরের জামাত তারা এই মাঠেই আদায় করবেন।

‘খেলার জন্য মাঠ চাই, তেঁতুলতলার দাবি তাই’, ‘একটি মাঠের খোলা আকাশ ঘটায় শিশুর বুদ্ধি বিকাশ’ ব্যানারে-ফেস্টুনে প্রতিবাদের ভাষা এঁকে শিশুরা দাঁড়িয়ে যায় সমাবেশে।

এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট,গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচি শিল্পীগোষ্ঠি, নাগরিক উদ্যোগ, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে কলাবাগানের অশীতিপর বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি পুলিশ বাহিনীকে বলছি-আপনার কাজ বন্ধ করে চলে যান। আপনারা এখানে থানা বানায়েন না। এখানে দুই ঈদের জামাত হয়। মানুষ মারা গেলে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমার স্ত্রীর জানাজাও এই মাঠে হয়েছে। আমি চাই, মারা যাওয়ার পর আমার মৃতদেহের জানাযাও এখানে হবে।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা জিনাত আরা লুনা বলেন, ‘করোনাকালে আমার স্বামী মারা গেছে। তার লাশ রাখা হয়েছিল এই মাঠে। এখানেই তার জানাজা হয়েছিল। তার লাশের গোসলও করানো হয়েছিল এখানে। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে তাকাই। মনে হয় আমার স্বামীর লাশের গাড়ি ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওর জানাজা হচ্ছে ওখানে।’

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এই মাঠে পুলিশের থানা ভবন হলে আমার ওই স্মৃতি মুছে যাবে। লাশ রাখার জায়গায় ভবন উঠতে পারে না। এখানে থানা নয়, উন্মুক্ত মাঠ চাই। মাঠটা ছেড়ে দেওয়া হোক।’

মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, ‘এটা থানা হওয়ার জায়গা নয়। এখানে থানা করতে দেওয়া হবে না। জায়গা দখল করার কর্মসূচিতে নেমেছে তারা। আগামী কালের মধ্যে মাঠ থেকে রড, সিমেন্ট পুলিশকে সরিয়ে নিতে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন,বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর শাওজাল প্রমুখ।

গত ৩১ জানুয়ারি থেকে কলবাগান থানা পুলিশ মাঠটি তারকাটা দিয়ে ঘিরে রাখে। রোববার সকালে পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর প্রতিবাদ ও ফেসবুকে লাইভ করার অভিযোগে ‘তেঁতুলতলা মাঠ বাঁচাও’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সৈয়দা রত্না এবং তার কিশোর ছেলে ইসা আব্দুল্লাহকে সকাল ১১টায় আটক করে কলাবাগান থানা পুলিশ। ১৩ ঘন্টা পর রাত ১টায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর