নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২১ এপ্রিল, ২০২২ ২:২৭ : অপরাহ্ণ
ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দুদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেয়া হয়েছে রাজধানীর নিউমার্কেট। তবে ব্যবসায়ীরা বিক্রি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা শুরু করেন। খুলে দেয়া হয়েছে আশপাশের সব মার্কেটগুলোও।
নিউমার্কেটের পাঞ্জাবির দোকানি রহমাত উল্লাহ জানান, তিনি দোকান খুলেছেন। তবে এখনও ভয় কাটেনি তার।
তিনি বললেন, ‘এ কয়েক দিনে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঈদের আগে আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সবারই লোকসান হয়েছে।’
আরেক দোকানি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘দুদিন দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী কর্মচারী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ হবে না। একই সঙ্গে, সংঘর্ষের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায়, আতঙ্কে অনেকেই এখানে কেনাকাটা করতে আসবেন না।’
এর আগে বুধবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসন এবং নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির মধ্যে হওয়া বৈঠকে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) সভা কক্ষে এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেবেন ব্যবসায়ীরা। আর, ভবিষ্যতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে গঠন করা হবে মনিটরিং সেল।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: তিন মামলায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীসহ আসামি ১২০০
চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে নিউমার্কেটসহ ওই এলাকার সব বিপণিকেন্দ্র খুলবে। আর ছুটির মধ্যে ছাত্রদের হলে থাকার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকের পর আর কোনো বিভেদ থাকবে না বলে আশা করছি। আজ সকাল থেকে নিউমার্কেটসহ আশপাশের সব মার্কেট ও দোকানপাট খুলবে। কলেজ যেহেতু আজ থেকে সরকারিভাবে বন্ধ, সেহেতু ছাত্রদের হলে থাকার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানকর্মীদের রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের পেছনে তৃতীয় পক্ষের উসকানি ছিল বলে দাবি করেছেন নেহাল।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন।
সংঘর্ষের রেশ চলে বুধবার দিনভর। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
বিকেলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন।
এরপর রাতে তারা সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জানান।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: আরও ১ জনের মৃত্যু