চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত ইউনিট কমিটি ঘোষণার পর নেতাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নব গঠিত কমিটির ছাত্রদল নেতাদের চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৯ এপ্রিল রাতে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের ২৬টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৪টি কলেজ ও ১২টি থানা ইউনিটের কমিটি।
অভিযোগ উঠেছে, কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদল নেতাদের ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
চাপের শিকার ও হুমকি পাওয়া ছাত্রদল নেতারা বিষয়টি কেন্দ্রে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্র থেকে সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতাদের সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রদলের কমিটির আহ্বায়ক পদে স্থান পাওয়া মো. মেহেদী হাসান রায়হানকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চাপ প্রয়োগ করে ও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর কমার্স কলেজে মেহেদী হাসান রায়হানকে আহ্বায়ক ও ফয়সাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল।
কমিটি ঘোষণার পর মেহেদী হাসান রায়হান ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন-‘আমি মো. মেহেদী হাসান রায়হান। আমার ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আমি পালনে সম্পূর্ণ অপারগ। আমি সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে পদত্যাগ করিলাম।’
পরে রায়হানের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি পদত্যাগপত্রের ফটোকপি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নগর ছাত্রদল নেতারা বলছেন, এ পদত্যাগপত্রের নিচে মেহেদী হাসান রায়হানের স্বাক্ষরটি স্ক্যান করা।
পদত্যাগ নিয়ে পোস্ট করার পর থেকে মেহেদী হাসান রায়হানের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ রয়েছে। তার ফেসবুক আইডিও ডিজেবল করে রাখা হয়েছে।
তবে তাকে চাপ প্রয়োগকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পরিচয় জানা যায়নি।
মেহেদী হাসান রায়হানের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন রাজনীতি সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, ‘মেহেদী হাসান রায়হানকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ফেসবুকে পদত্যাগের পোস্ট লিখতে বাধ্য করেন। পরে একটা কাগজে তার স্বাক্ষর নেন। এই স্বাক্ষর স্ক্যান করে তারা ছাত্রদলের প্যাডে পদত্যাগপত্র লিখেন। রায়হান কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।’
শরিফুল ইসলাম তুহিন জানান, কমিটি ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকটি ইউনিটের নেতাদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগ করছেন।
আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফয়সাল উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘শনিবার রাতে কমিটি ঘোষণার পর মেহেদী হাসান রায়হানের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়। আহ্বায়ক পদে স্থান পেয়ে তিনি অনেক খুশি হন। কমার্স কলেজে ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার কথা বলেন। তাকে যে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখতে বাধ্য করা হয়েছে সেটা কারো না বুঝার কথা নয়।’
শুধু আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ নয়, ওমর গণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের আহ্বায়ক তারেক আজিজ ও সদস্য সচিব ফারুক মির্জাকেও পদত্যাগ করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমইএস কলেজে প্রথমবারের মতো ৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল।
কমিটির সদস্য সচিব ফারুক মির্জা রাজনীতি সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সোমবার সকাল ১১টার দিকে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন করে ভদ্রভাবে প্রথমে আমার পরিচয় জানতে চান। পরিচয় জানার পর তিনি বলে উঠেন-‘তুই কি আমাকে চিনস? আমি তোর বাপ রনি বলতেছি। তোদেরকে বার বার মানা করার পরও এমইএস কলেজে কমিটি দিছস।’ এরপর তিনি আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি কি ছোট বাচ্চা, অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে তাকে হুমকি দিবো? সে কি আমার সাথে কথা বলছে? আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।’
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুনও কমিটি নিয়ে ফেসবুকে ছাত্রদলকে আক্রমণ করে পোস্ট দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম পোস্টে লিখেছেন, ‘কলেজে যদি কোন ধরণের বেগুন জিয়ার সৈনিকদের গন্ধ পায় তাহলে খেলা হবে..!!!’
মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুন ফেসবুক পোস্টে সরাসরি হুমকি দিয়ে লিখেন, ‘মহসীন কলেজ ক্যাম্পাসে জিয়ার সৈনিকদের তথাকথিত কমিটিকে প্রতিরোধ করবে মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম দাবি করেন, তিনি ফেসবুকে পোস্টটা ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে লিখেননি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল যে কোনো ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তবে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসে রাজনীতি করতে চাইলে আমরা তাদের প্রতিহত করবো।’
নগর ছাত্রদলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকি ও চাপ দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে, তারা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কতটা আতঙ্কিত। মামলা-হামলায় জর্জরিত ছাত্রদলকে নিয়ে যদি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে সেটা তাদের জন্য লজ্জার বিষয়।’
আরও পড়ুন: প্রশ্ন: বাবরের নাম শুনলে মানুষ কেন আতঙ্কিত হয়, উত্তর: মিডিয়া আমাকে ভিলেন বানিয়েছে