প্রতিনিধি,সিলেট প্রকাশের সময় :৩০ মার্চ, ২০২২ ১:১৫ : অপরাহ্ণ
সিলেটের বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাত বছর পরে এ রায় প্রদান করা হলো।
অনন্তের আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যেরা রায়ে সন্তুষ্ট থাকলেও খালাস পাওয়া আসামির বিরুদ্ধে উচ্চআদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-আবুল খায়ের রশিদ, আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ও মামুনুর রশিদ।
এর মধ্যে আদালতে আবুল খায়ের রশিদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন।
খালাস পাওয়া আসামি হলেন-শফিউর রহমান ফারাবী।
অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বুধবার এ মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী প্যানেল ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন। তবে, বিজ্ঞ আদালত পর্যবেক্ষণ শেষে এক জনকে খালাস দিলেও উচ্চআদালতে তাঁর বিরুদ্ধে লড়বেন তাঁরা।
অন্যদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সর্ষের দানা পরিমাণ অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।’ ‘তার পরেও এ রায়ের বিপক্ষে’ তিনি উচ্চআদালতে আবেদন করবেন বলে জানান।
এ ছাড়া আদালতে উপস্থিত থাকা সাফিউর রহমান ফারাবীকে খালাস দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ১২ মে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও অফিসে যেতে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় দাশ।
সিলেট নগরের সুবিদবাজারের দস্তিদারপাড়ায় থাকতেন তিনি।
বাসা থেকে বের হয়ে মূল সড়কে আসার পরপরই আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা করে। তবে প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকেন অনন্ত। শেষে বাড়ির পাশে দিঘির সামনে নিয়ে তাকে কোপানো হয়।
অনন্তের চিৎকার শুনে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন তার বোন। অনন্তকে হাসপাতালে নিতে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য চান। কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে ক্ষতবিক্ষত অনন্তকে তারা ভাই-বোন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রতেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন।
এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।