রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

প্রথমে বিরত, পরে ইউক্রেনের পক্ষে ভোটদানের ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩০ মার্চ, ২০২২ ৩:৩৫ : অপরাহ্ণ
জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও
Rajnitisangbad Facebook Page

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে নয়, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মানবাধিকার রক্ষায় ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দেয়া হয়েছে।’

আজ বুধবার সকালে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়ায় শুধুমাত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রস্তাবে মানবতার বিষয় থাকায় বাংলাদেশ ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর প্রতিবাদে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেখানে বালা হয়েছিল, রাশিয়া যেন অবিলম্বে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে এবং সেনা ফিরিয়ে নেয়। সেই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ।

প্রথমে জাতিসংঘে আনা প্রথম প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বাংলাদেশের বিরত থাকার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নাই, সেখানে কোন বিষয় নাই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট, সেটা হলো রাশিয়া। তখন আমি বললাম, না, এখানে তো আমরা ভোট দেবো না। কারণ যুদ্ধ তো একা একা বাধে না। উসকানি তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে টিয়ে তো বাঁধালো যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে কনডেম (নিন্দা) করা হবে কেন? সেই জন্য আমরা ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলাম।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জাতিসংঘে আনা একাধিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল রাশিয়া। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পর ভারত মহাসাগরে তারা নৌবাহিনীর বহরও পাঠিয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা যখন সেভেন্থ ফ্লিট পাঠায় পাকিস্তানের পক্ষে, রাশিয়া তখন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কাজেই যারা দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু তারা যদি কোন অন্যায় করে, সেটা আমরা মানবো না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধাল কারা, উসকানিটা কারা দিলো, সেটাও তো আপনাদের দেখতে হবে। সে জন্য আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু এটা শুধু একটা দেশের পক্ষে, আমরা ভোট দেবো না।’

প্রথমবার যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি-তাদের নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো।

তবে ২৪ মার্চ ইউক্রেনের আনা দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনে মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। যদিও জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এই প্রস্তাবটিকে একতরফা বলে সমালোচনা করেন। তারপরেও এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রস্তাবটা যখন আসল, ইউক্রেনে এই যুদ্ধের কারণে মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, রিফিউজি হয়ে যাচ্ছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে মানব অধিকারের বিষয়টা ছিল। ইউক্রেনের দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকারের প্রশ্নটা, সেইখানে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে।’

এ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছে, তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা একেবারে স্পষ্ট, সেখানে কারও কোন দ্বিধা থাকার কথা না। তবে আমাদের যে একটা প্যাঁচানো গোষ্ঠী আছে….ওদের যতই বলেন, তাদের কিছুই ভালো লাগবে না। কারণ বাংলাদেশে দারিদ্র্য না দেখালে এনজিওর টাকা পায় না, বাংলাদেশে গোলমাল না দেখালে তাদের কনসালটেন্সি আসে না। তাদের নিজেদের কী পাবে, কীভাবে পাবে, সেটাই (তাদের কাছে) বড় কথা। বাংলাদেশ এতো দূর এগিয়ে যাবে, সেটা তারা কখনো ভাবতেই পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে লেখালেখি যেই করুক, যখন একটা দেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব, তখন আমরা দেইনি ভোট। যখন মানবাধিকারের বিষয় আসছে, মানবতার বিষয়টা সামনে আসছে, আমরা ভোট দিয়েছি।’

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর