নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৭ মার্চ, ২০২২ ৭:৩১ : অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ‘নতুন মুক্তিযুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘১৯৭১ সালে এই চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আসুন, আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সমাবেশ’ নামে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সময় শেষ। যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না। কয়দিন আগে আমেরিকা থেকে ধমক খেয়ে ইউক্রেনকে ভোট দিয়েছে। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দিনের ভোট নেয় রাতে। ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠন করেছে। এখন সময় এসেছে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার।’
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। সরকার এখন বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। খুন-গুমের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দেশের জন্য লজ্জার, জাতির জন্য লজ্জার। অথচ আওয়ামী লীগের নির্দেশেই এসব খুন-গুমের ঘটনা ঘটেছে।’
এর আগে দুপুরে বিএনপি মহাসচিব পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্বাধীনতা ঘোষণার প্রচারকেন্দ্র কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যাওয়ার সময় নগরীর ২ নম্বর গেইট মোড়ে পুলিশ আটকে দেয়।
কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে সমাবেশে পুলিশকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা জনগণের বাহিনী। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। সাবধান হয়ে যান। অশালীন কথা বলবেন না, জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। সেদিন জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে এদেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বলি, তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে। এরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে এরাই। তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র যেতে দেয়নি। আমরা যদি সেখানে যেতে পারতাম, তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে বলতাম যে, এই বেতারকেন্দ্র থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের যেতে দেয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়া-দেশের মানুষকে আমরা একথা বললে আওয়ামী লীগ ভয়ে ভীত হয়ে যায়। এই ভয়ে তারা আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেয়নি।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সকল বিদেশি গণমাধ্যমে সেদিন শহিদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের বইয়েও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন শুনেছিলেন।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে ২৭ মার্চ পালন করবো। আগামী বছর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে পালন করবো।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু মুক্তিযুদ্ধকে বেচাকেনা করে, তাদের কোনো ইতিহাস নেই। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, এই সরকারের পতনের আন্দোলনের সূচনাও হবে এই চট্টগ্রাম থেকে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্বাধীনতা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক ও গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রমুখ।