নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২০ মার্চ, ২০২২ ৮:৫১ : অপরাহ্ণ
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। পরেই ম্যাচে বিবর্ণ দল।
অন্যদিকে পিঙ্ক ডে’মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার দাপুটে ক্রিকেটের রেকর্ড। ব্যতিক্রম হয়নি জোহানেসবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও।
গোলাপি ওয়ানডেতে টাইগারদের হেসে খেলে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্যান্সার সচেতনার অংশ হিসেবে ঘরের মাঠে বছরে অন্তত একটি ম্যাচে গোলাপি (পিঙ্ক) রঙের জার্সি পরে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। যেটি ক্রিকেটে ‘পিঙ্ক ডে’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
গোলাপি জার্সি পরে খেলা আগের আট ম্যাচের ছয়টিতে জয়ের হাসি হেসেছে প্রোটিয়ারা। টেম্বা বাভুমার দল সংখ্যাটি আরও বাড়িয়ে নিলো।
আজ রোববার জোহানেসবার্গের দ্যা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৯৪ রানে তুলে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই টাইগার পেসারদের উপর চড়াও হন দুই উদ্বোধনী ব্যাটার জানেমন মালান ও কুইন্টন ডি কক।
উদ্বোধনী জুঁটিতে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ছিল ৮৬ রান। ব্যক্তিগত ২৬ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে প্রথম উইকেটে আউট হন জানেমন মালান।
কিন্তু অপর প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা কুইন্টন ডি কককে তখনো থামানো যায়নি। মাত্র ২৬ বলে করেছেন ব্যক্তিগত ৫০ রান।
এরপর ইনিংসের ১৬তম প্রোটিয়াদের এই মারমুখী ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এরপর কাইল ভেরেইন ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা দলকে প্রায় জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।
প্রোটিয়াদের জয়ের শেষদিকে এসে ইনিংসের ৩৩তম ওভারে আফিফ হোসেনের বলে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে আউট হন বাভুমা।
কাইল ভেরেইন ৫৮ ও ভ্যান ডান ডুসন ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
৭৬ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় অর্জন করে ১-১ সমতায় ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
টাইগারদের হয়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে এই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে সময় নেননি প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা।
রাবাদার পেস আক্রমণের সামনে দাড়াতে পারেনি সাকিব-তামিম ও লিটনরা।
আগের ম্যাচে দারুণ খেলা তামিম এদিন করেন মাত্র ১ রান।
ওয়ানডাউনে নামা সাকিব আজ হাল ধরতে পারলেন না। রাবাদার বল লেগে ঘুরানোর চেষ্টা করে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সহজ ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে শূন্যতে বিদায় করেন কাইল ভেরেইনা।
এরপর ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন দলকে ভরসা দেওয়া লিটন দাস। তিনি ২১ বলে তিন চারে ১৫ রানের ইনিংস খেলেন। রান পাননি মুশফিকুর রহিম (১১) ও ইয়াসির রাব্বি (২)।
ওয়েন পার্নেল ও কাগিসু রাবাদার পেস-বাউন্সে পরাস্ত হয়ে মাথা নিচু করে ফিরে যান মিডল অর্ডারের এই দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার।
দলীয় ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে শতরানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুজনে মিলে গড়েন ৬০ রানের জুটি।
কিন্তু আর বড় হওয়ার আগেই জুটি ভাঙেন শামসি। তিন বাউন্ডারিতে ৪৪ রানে ২৫ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও উইকেটে টিকে ছিলেন আফিফ। স্রোতের বিপরীতে থাকা আফিফ তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি।
নির্ভার থাকা আফিফ মিরাজকে নিয়ে লম্বা সময় লড়াই করেন। তার ব্যাটে চড়েই মোটামুটি সম্মানজনক স্কোর পায় বাংলাদেশ।
৭২ রানের ইনিংস খেলে থামে আফিফের ইনিংস। ১০৭ বলে তার ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি।
আউট হওয়ার আগে ১ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৯ বলে ৩৮ রান করেন মেহেদি মিরাজ।
এরপর ব্যাট হাতে তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম তেমন এটকা সুবিধা করতে পারেন নি।
শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
বল হাতে একাই বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দিয়েছেন ডানহাতি প্রোটিয়া পেসার রাবাদা। তিনি ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
দারুণ বোলিং করেছেন লুঙ্গি এনগিডিও। তিনি ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (তামিম ১, লিটন ১৫, সাকিব ০, মুশফিক ১৫, ইয়াসির ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯, মুস্তাফিজ ২, শরিফুল ২ ; রাবাদা ১০-০-৩৯-৫, শামছি ১-০-২৬-১, কেশব ১০-০-৫৭-০, বাভুমা ৬.১-০-২২-০, এনডিগি ১০-২-৩৪-১, পার্নেল ২.৫-০-৬-১)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭.২ ওভারে ১৯৫/৩ (মালান ২৬, ডি কক ৬২, তেম্বা ৩৭, কাইল ৫৮, রাসি ফন ডার ডাসেন ৮; তাসকিন ৪-০-৪১-০, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, শরিফুল ৪-০-২৯-০, মিরাজ ১০-০-৫৬-১, সাকিব ১০-২-৩৩-১, আফিফ ৫-০-১৫-১)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা সাত উইকেটে জয়ী।