নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:১৫ : অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরে ফাইনালের মতোই ফাইনাল দেখল ক্রিকেট ভক্তরা। যার পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা।
পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
ফরচুন বরিশালকে জিততে শেষ ৩ বলে ৭ রান প্রয়োজন ছিল।
২ রান নেয়ার পর দ্বিতীয় বলে তৌহিদ হৃদয় ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলে তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন তানভির ইসলাম।
শেষ বলে ৩ রানের প্রয়োজন হলে এক রান নিতে সক্ষম হয় বরিশাল।
ফলে ১ রানে ম্যাচ জিতে তৃতীয় বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
মেগা ফাইনাল ম্যাচে ফরচুন বরিশালের শুরুটা ছিল চরম হতাশার। সুনিল নারাইনের ব্যাটিং তাণ্ডবে রীতিমতো ধোঁয়া দেখেছিল বরিশাল।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে সাকিব আল হাসানের দল। কিন্তু শেষ দিকে তীরে এসে তরি ডুবলো বরিশালের।
বিপিএলে এর আগেও দুবার ফাইনালে উঠেছিল বরিশাল। দুবারই শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল।
এবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বেও পারল না তারা। নিজেদের তৃতীয় ফাইনাল থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হলো কীর্তনখোলা নদীর পাড়ের দলটিকে।
অন্যদিকে আগের দুবার ফাইনালে ওঠে বাজিমাত করা কুমিল্লা এবার ঘরে তুলল নিজেদের তৃতীয় শিরোপা।
আজ শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হাই ভোল্টেজ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৫১ রান তুলে।
জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫০ রানে থামে ফরচুন বরিশাল।
কুমিল্লার দেওয়া ১৫২ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বরিশাল।
দলীয় ৫ রানে হারায় ছন্দে থাকা মুনিম শাহরিয়ারকে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শহিদুলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
সাত বল খেলে রানের খাতাও খুলতে পারেননি মুনিম।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে বরিশালকে পথ দেখান সৈকত আলী। উইকেটে এসে ঝড় তুলে মাত্র ২৬ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি।
মোট ৩৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে বরিশালের পথ সহজ করে দেন সৈকত। তিনি ফেরার পর ৩১ বলে ৩৩ করে বিদায় নেন গেইল।
উইকেটে এসে টিকতে পারেননি সাকিবও। অধিনায়ক ফিরলে ব্যাটিংয়ে ধস নামে বরিশালের।
ফাইনালের চাপ সামলে জয়ের কাছে গিয়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বরিশালকে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপে পরিণত হলে যে পরিস্থিতি হয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ইনিংস ছিলো তেমনই।
আগের ম্যাচে বিপিএলের দ্রুততম অর্ধশতক হাঁকানো নারাইন যথারীতি শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলছিলেন।
মুজিব উর রহমানের করা প্রথম ওভারেই তিনি নেন ১৭ রান। ২১ বলে পূর্ণ করেন অর্ধশতক। ৫ম ওভার শুরু করেন মেহেদী হাসান রানাকে ছক্কা হাঁকিয়ে।
তবে ঐ ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় নারাইনকে।
বিদায়ের আগে ২৩ বলের মোকাবেলায় করেন ৫৭ রান, হাঁকান পাঁচটি করে চার-ছক্কা।
নারাইনের আগেই বরিশাল শিকার করে লিটনকে। তবে মূল বিপর্যয় শুরু হয় নারাইনের বিদায়ের পর।
দলীয় ৯৪ রানে ব্রাভোর বলে উইকেট বিলিয়ে দেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
তার বিদায়ে বিপদে পড়ে কুমিল্লাও। ১২ বলে ১২রান করে আউট হন কুমিল্লা দলপতি।
একের পর এক উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা কুমিল্লার বিপদ আরও বাড়ে আরিফুলের বিদায়ে।
১১তম ওভারে আরিফুলকে স্পিনে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন মুজিব উর রহমান।
খেই হারিয়ে ফেলা কুমিল্লা ৯৫ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট।
৬ ওভার শেষে যে কুমিল্লার রান ছিল ৭৩, ১৮ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ১৪১।
৬ উইকেট হারিয়ে কুমিল্লা যখন খাদের কিনারায় তখন ক্রিজে এসে কুমিল্লার স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মঈন আলী চেষ্টা করেন রানের গতি বাড়াতে।
পেসার আবু হায়দারকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কুমিল্লাকে সম্মানজনক স্কোর পাইয়ে দেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার।
রানআউট হওয়ার আগে মঈন আলী ৩২ বলে ৩৮ রান করেন মঈন, হাঁকান দুটি চার ও একটি ছক্কা।
ফরচুন বরিশালের হয়ে বল হাতে ২৭ রান খরচায় দুটি উইকেট নেন মুজিব উর রহমান।
শফিকুলও নিয়েছেন দুটি উইকেট। ৩০ রান দিয়ে সাকিব আল হাসান নিয়েছেন এক উইকেট। মেহেদী হাসান রানা ও ব্রাভোর শিকারও একটি।