সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ৯:২৫ : পূর্বাহ্ণ

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম জানান, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল দুপুরের পর এ মামলার রায় ঘোষণা করতে পারেন।

রায়ে মামলার প্রধান দুই আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফ থানা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিনহার পরিবার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, ‘মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে চার্জশিটভুক্ত ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিশাল তালিকার এ সাক্ষ্য-জেরা চ্যালেঞ্জিং হলেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দ্রুততার সঙ্গে মামলাটি শেষ করতে চেষ্টা করেছি। এখন আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’

অন্যদিকে বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘আমরাও চাই সিনহা হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার হোক। যারা প্রকৃত দোষী তাদের শাস্তি হোক। তবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পান।’

মামলার রায়ে প্রত্যাশা সম্পর্কে সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়-এটাই রায়ে প্রমাণ হোক। এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে বলে আশা করি।’

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে এপিবিএন চেকপোস্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে।

অবসরে যাওয়ার পর ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন রাশেদ।

তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

বিষয়টি উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামী করা হয় সিনহার সঙ্গি সিফাতকে।

কিন্তু সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের ৬ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলা করেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

তদন্ত শেষে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চার্জশিট প্রদান করেন।

এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন।

তারপর ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।

৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।

সবশেষে গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি মামলায় দু’পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করলে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।

এই মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাবেক এএসআই সাগর দেব।

আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতবছর ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর